বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার হালচাল
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার হালচাল
আমাদের দেশে ক্যান্সার হলে সবার মধ্যে একটি ধারণা কাজ করে, হয়তো চিকিৎসার জন্য তাকে বাইরে যেতে হবে। অনেকেই জানেন না, আমাদেরও ক্যান্সারের অনেক উন্নত চিকিৎসা আছে।
আমি ক্যান্সার বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছি ২০০৬ সালে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমার কাছে যেসব রোগী এসেছেন, তাদের ৫০ শতাংশের বেশি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। এর বড় কারণ নারীরা সব সময় নারী চিকিৎসকের কাছে আসতে স্বস্তি অনুভব করেন। জরায়ুমুখে ক্যান্সারে আক্রান্তও অনেক রোগী আসেন।
অনেকে আমার কাছে ১০ বছরের বেশি ফলোআপ করছেন। ফলে রোগটি নিয়ে আমার কাছে অনেক তথ্য আছে। এসব রোগীরা কেন আসছেন, কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? তাহলে ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট অবশ্যই দেশে আছে। তা না হলে তো তারা এতদিন ফলোআপ করাতে পারতেন না।
আমার একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে, সেখানে ১০-১২ বছর পরেও ফলোআপে আসা রোগীদের অনুভূতির স্টোরিগুলো আমি প্রকাশ করি। এর অন্যতম লক্ষ্য, ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তারা যেন আশস্ত হন। দেশেই চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা বেঁচে আছেন এবং ভালো আছেন, তা জানতে পারছেন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসা আসলে কি? প্রথম কথা হচ্ছে, রোগটি নির্ণয় করা। আগে রোগ নির্ণয় একটু জটিল ছিল। রোগ নির্ণয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হতো। সেসব পরীক্ষার যন্ত্রপাতি আগে আমাদের কাছে ছিল না। এখন উন্নত বিশ্বে যেসব পরীক্ষা যে যন্ত্রে করা হচ্ছে, আমাদের দেশেও সেগুলো খুব দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোনথেরাপি ইত্যাদি ক্যান্সার চিকিৎসা আমাদের রয়েছে। সার্জারি থেকে শুরু করে সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট বাংলাদেশে এখন খুব সহজেই পাওয়া যায়। শুধু ক্যান্সারের সার্জারি করে থাকেন, এমন বিশেষজ্ঞও দেশে আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যারা শুধু ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়েই কাজ করছেন। আলাদা ব্রেস্ট সার্জারিও আছেন, তাদের দিয়ে আমরা ভালোমানের সার্জারি করাতে পারি। পরবর্তী যে চিকিৎসা— সার্জারির পরে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি উন্নত চিকিৎসার সবই আমরা করতে পারছি। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনাতেও এগুলো এখন হচ্ছে।
আমি আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল রয়েছি। এখানে উন্নতমানের দুটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন আছে। এ ছাড়া কোবাক মেশিন আছে, ভ্যাক (VAC) থেরাপি আছে। সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। আমাদের এখানে দিনে প্রায় ১০০ রোগীর ডেকেয়ারে চিকিৎসা দিতে পারি। শুধু চিকিৎসক বললে হবে না, নার্সসহ অন্যান্য কর্মী সবাই মিলেই সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। আমি মনে করি, ক্যান্সার চিকিৎসায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে নেই।