ওমিক্রন ঢেউ সামলাতে কতটা প্রস্তুত স্বাস্থ্যব্যবস্থা?
ওমিক্রন ঢেউ সামলাতে কতটা প্রস্তুত স্বাস্থ্যব্যবস্থা?
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। এর মূল কৌশল হচ্ছে- সংক্রমণের মাত্রাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা। ইংরেজিতে বলা হয়- ‘গ্রেডেট রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’। অর্থাৎ সংক্রমণ যত বাড়বে, পরিকল্পনার বিস্তৃতির গভীরতা তত বাড়বে।
একইসঙ্গে আরেকটি কাজ করতে হয় ‘এপিডেমিক প্রজেকশন প্ল্যান’। মানে আজকের দিনে যখন সংক্রমণ ছড়ায় কিছুটা বেশি এবং যে ভাইরাসগুলোর কারণে সংক্রমণ হচ্ছে, তার যে সংক্রমিত করার ক্ষমতা- এগুলো মিলে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক নিয়ম রয়েছে। তন্মধ্যে ‘এপিডেমিক প্রজেকশন প্ল্যান’ বা মহামারীর আগত চিত্রটা কী হতে পারে সেটি তৈরি করা হয়। সেই অনুযায়ী কোন কোন জায়গায় আমরা প্রতিরোধ করবো সে জায়গাগুলো ঠিক করতে হয়।
ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স, সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স লাইন, থার্ড লাইন অব ডিফেন্স এবং তারপরে কী পরিমাণে রোগী হতে পারে, সে অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করতে হয়। যেমন- ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ভারতে যে হারে ওমিক্রন বাড়ছে বা করোনা বাড়ছে, তাতে প্রতিদিন ভারতের ৬০ হাজার মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। তাহলে এ জন্য তো প্রস্তুত থাকতে হবে।
যদি বাংলাদেশে (আমি আলোচনার খাতিরে এটা বলছি) বাংলাদেশেও ভারতের মতো অবস্থা হলো। জনসংখ্যার যে অনুপাত, সেই অনুযায়ী বাংলাদেশে তাহলে ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হবে। আমাদের এই সক্ষমতা কী রয়েছে? নিঃসন্দেহে নাই।
কারণ এ রকম রোগী ভর্তি হতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই চিকিৎসা ব্যবস্থা সঙ্গে হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাহলে আমাদের কী করতে হবে?
একটি হচ্ছে কি কি করলে রোগী কমানো যায়, সেই পথগুলো বের করা। অন্যদিকে সংক্রমণ যদি বেড়েই যায়, তাহলে ফিল্ড হাসপাতালসহ আর কি কি করা যায়, সেই পথগুলো তৈরি রাখা। এজন্যই বলা হয় ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’, মানে তীব্রতা যত বাড়বে এবং রোগের সংক্রমণের ব্যাপ্তি যত বাড়বে, পরিকল্পনা সেভাবে বাড়বে।
দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে এই পরিকল্পনাটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়নি। হয়নি বলেই, প্রতিবারই আমরা পরিস্থিতি যা সে অনুযায়ী আমরা রিয়্যাক্ট করি, মানে প্রতিক্রিয়া দেখাই। আমরা কিন্তু অ্যাক্ট করি না বা কো-অ্যাক্ট করি না। অর্থাৎ সমস্যাটা আসার আগে আমরা কি কি করবো সেটা ঠিক করে অগ্রসর হয়নি। এটি হচ্ছে আমাদের করোনা প্রতিরোধী পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।