স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী স্বাস্থ্যের অর্জন

অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম
2021-12-26 15:45:16
স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী স্বাস্থ্যের অর্জন

স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী স্বাস্থ্যের অর্জন

আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধে একেবারে সম্মুখ সমরে না থাকলেও তার ভয়াবহতা অনুভব করেছি। সেই সময় থেকে নারী স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত আমি। তখন যে পর্যায়ে ছিলাম, তা থেকে আজকের অবস্থান পর্যালোচনা করলে নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের অর্জন অনেক বেশি।

আজ আমাদের স্থায়িত্ব দৃশ্যমান, নারীর গড় আয়ু বেড়ে প্রায় ৭৩ বছর হয়েছে। ২০ বছর আগেও মেয়েরা ৫৯ বছর বয়সে মারা যেত এবং আমরা সেটিকে স্বাভাবিক ধরে নিতাম। এখন কিন্তু একজন নারী ৭৩ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকছে।

৫০ বছর পেছনে ফিরলে অর্জনের জন্য আমি সর্বপ্রথমে আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতিত্ব দেব। তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পা রেখেই নারী স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের প্রায় ২ লাখ নারী তাদের সম্ভ্রম হারিয়ে কি অবস্থায় জীবনযাপন করছিলেন, তা বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন। সবার আগে তিনিই নারী স্বাস্থ্য ঠিক করতে এগিয়ে এলেন এবং ঘোষণা দিলেন— ‘তোমাদের কোনো চিন্তা নাই। তোমাদের যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তোমাদের ঠিকানা কোথায়? তোমরা বলবে ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি। আর যদি কেউ পিতার নাম জিজ্ঞাসা করে বলবে শেখ মুজিবুর রহমান।’

এই একটি ঘোষণার পর নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। নারীরা রাষ্ট্রের সুরক্ষা পেল, আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা সহযোগিতায় এগিয়ে আসল। তারপর বঙ্গবন্ধু চিন্তা করলেন, একবারে প্রান্তিক পর্যায়ে নারী স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। এরপর তিনি কমিউনিটি লেভেলে ক্লিনিক গড়ার মাধ্যমে মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

সেই থেকে আজকে স্বাস্থ্যের যে পর্যায়ক্রম— কমিউনিটি ক্লিনিকের পরে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে। আজকে এতগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক কিন্তু তাঁর চিন্তা থেকেই। তাঁর সেই চিন্তার ধারক-বাহক আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পিতার স্বপ্নটিকে আরও বেগবান করেছেন।

একটা সময় ছিল প্রতি ২০ মিনিটে একজন করে মা মারা যাচ্ছেন সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। যখন সেই সংখ্যাটি আমরা বলতাম, নিজের কাছেই লজ্জা লাগত। প্রতি ২০ মিনিটে একজন করে মা মারা যাচ্ছেন, মাতৃস্বাস্থ্যের কী দুর্বিষহ অবস্থা! প্রায় ৯০ লাখ মায়ের বাড়িতেই ডেলিভারি হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আজকে কিন্তু আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি। আজকে মাতৃমৃত্যুর হার আমরা একবারে কমিয়ে আনতে না পারলেও যেখানে প্রতি লাখে ৫০০ মা মারা যেতেন, আজ তা ১৬৮-১৭২-এ নামিয়ে এনেছি। যদিও আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে মাতৃমৃত্যু লাখে ৭০ জনের নিচে আনতে হবে।

আমরা চাই না একজন মাও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাক। এটি তার মৌলিক মানবাধিকার, ভালোভাবে জন্ম দিবেন। তো সেই জায়গা থেকে একটা ধাপে ধাপে কিন্তু আমরা কমিউনিটি লেভেল থেকে নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ চলছে। কাজেই আমি নিজেকে মনে করি, আজকে আমি একজন নারী চিকিৎসক হয়ে আপনাদের সামনে বসে কথা বলতে পারছি নারী স্বাস্থ্য নিয়ে এবং এই যে কিশোরী থেকে শুরু করে মেয়েদের মাসিক যে বন্ধ হয়ে যায়, তারপরের যে বছরটা সেখান থেকে মেয়েরা যে দীর্ঘকাল বাঁচে মানে ৪৫ থেকে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় পরের যে দীর্ঘকাল বাঁচে, সেই সময়টাতেও কিন্তু তারা অনেক বেশি কাজ করছেন এবং সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্রকে দিতে পারছেন।

তো এই যে অর্জন এটা কিন্তু বঙ্গবন্ধুই আমাদের দিয়েছিলেন কাজ করার উৎসাহ। তখন থেকেই শুরু করে আজকে আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সর্বোচ্চ মান হয়ত এখনো সম্ভব হয়নি। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে যা হয়েছে, তাকে একেবারে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।


আরও দেখুন: