ডা. ফজলে বারি, বদলে যাওয়া নাজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রূপকার
একটি ভগ্নদশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন এনেছেন ডা. ফজলে বারি
আমার পছন্দের ও অনুকরণীয় মানুষগুলোর নাতিদীর্ঘ তালিকার অন্যতম একজন নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. ফজলে বারি জ্যোতি স্যার। সরকারি চাকরি জীবনের আমার প্রথম আড়াই বছর যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কেটেছে, উনি সেটিরই প্রধান। আমি আফসোস করি এই ভেবে, আমার সময়ে যদি উনাকে পেতাম, চাকরি জীবনের সেই সময়গুলো অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকত। অনুকরণীয় এক স্যারের অধীনে শেখা হতো ভালো অনেক কিছু।
একটি ভগ্নদশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন এত অল্প সময়ে কীভাবে এত উন্নত করা যায়, এত ডেডিকেশন কীভাবে দেওয়া যায়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ ডা. ফজলে বারি জ্যোতি। তিনি যে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছেন সে তালিকা বেশ দীর্ঘ, সেসব আরেক দিন লিখব বিস্তারিত। যাদের কোনো শত্রু নেই, তারা হলো অন্যায়কে মেনে নেওয়া, স্রোতে গা ভাসিয়ে চলা সুবিধাভোগী। অন্যদিকে প্রকৃত ভালো মানুষের শত্রুর শেষ নেই। কারণ ভালো মানুষই হলো অন্যের অন্যায় কাজের সবচেয়ে বড় বাধা। আর তাই এই ভালো মানুষটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের কোনো কমতি করেনি খারাপ মানুষগুলো।
সরকারি হাসপাতালে ওটি, প্যাথলজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনো, উপজেলার সাধারণ মানুষের জন্য সার্বিক যত চিকিৎসা সুবিধা আয়োজন করা যায়, তার সবই তিনি করেছেন। আর এসব যে কিছু মানুষের লাভে কমতির কারণ হবে, তাদের গাত্রদাহ হবে তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এই স্বার্থপর মানুষগুলো একটিবারের জন্যও চিন্তা করে না এটি তাদের সৌভাগ্য। তারা এ রকম নিবেদিতপ্রাণ ইউএইচএফপিও পেয়েছে, যিনি তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছেন, তলানিতে পড়ে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
কিন্তু কথায় আছে, চোরে শোনে না ধর্মের কাহিনী। তাই তারা বারবার একাট্টা হয়েছে মনগড়া সব অভিযোগ দিয়ে এই মানুষটিকে ছোট করতে, অন্যত্র সরিয়ে দিতে, যাতে তাদের অনৈতিক লাভের পথ প্রশস্ত হয়। শেষমেষ তারা পাগলের মতো হাজির হয়েছে ছাগল কাহিনী নিয়ে। ফেঁদেছে মিথ্যা বানোয়াট গল্প, অন্যের ছাগল মেরে না কি চিকিৎসকদের ভূরিভোজ!
আমি যখন উপজেলায় ছিলাম, সেই দুই বছর আগের কথা, ছবিগুলো তখনকার। স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে অনেক আতিপাতি নেতার ছাগল গরু তখন অবাধে বিচরণ করে হাসপাতালের সবখানে। ছাগলগুলো কোয়ার্টারের সিঁড়িতে এসে দল বেধে বাস করে, ঘুমায়, হাগে! মাঝে মাঝে তো কথাই নেই, দরজা খোলা পেলেই ঢুকে যেত রুমের ভেতর আর তারপর হেগেমুতে জিনিসপত্র নষ্ট করে সর্বনাশ!
এসব দেখেশুনে মন খারাপ হতো, আরও বেশি মন খারাপ হতো এতে আমার কিছু বলার নেই। কারণ এগুলো অমুক প্রভাবশালী নেতার ছাগল, তমুক নেতার গরু, সরকারি হাসপাতাল তাদের পারিবারিক সম্পত্তি! এসব নেতাদের কেউ কেউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের শেয়ারধারী। তাদের লাভের ভাগে, দালালিতে জড়িত হাসপাতালের কিছু স্টাফও। সব মিলিয়ে তাদের সাথে সমঝোতা করেই টিকিয়ে রাখতে হয় অস্তিত্ব! অন্যায়কে চোখ বুঝে মেনে নিতে হয়।
অন্যথায় পড়তে হয় নানা বিপত্তিতে। প্রতিবাধ করলে পেতে হয় মারমুখী আচরণ। তবুও আপোস করিনি, কিছুটা হলেও আইনি শিক্ষা দিয়ে এসেছি!
পরিশেষে দাবি এটাই, ছাগল খাওয়া নিয়ে মিথ্যা অভিযোগকারী ও এর পেছনে কলকাঠি নাড়া কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনা হোক, মানহানির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথায়থ ব্যবস্থা নিক কর্তৃপক্ষ। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা যেন চিরতরে বিলীন হয় খারাপ লোকগুলো, নিশ্চিত নির্বিঘ্ন হয় ভালো মানুষের পথচলা।
লেখক: ডা. মো. কাওসার উদ্দিন
সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল