পরের ভয়াবহ মহামারী কি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স?

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু
2021-11-17 22:18:05
পরের ভয়াবহ মহামারী কি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স?

কোভিডের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট যেটা হওয়ার কথা ছিল পাঁচ বছর পরে, সেটা ঘটবে তিন বছর আগে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলতে আমরা বুঝি- ব্যাকটেরিয়ার এক ধরনের শক্তি অর্জন করা বা অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার পদ্ধতি বা একটি পথ শিখে ফেলা। মানুষ যেমন প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে বা বাঁচার পদ্ধতি শিখে ফেলে, ঠিক তেমনি ব্যাকটেরিয়াও অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে বাঁচার পদ্ধতি এমনিতেই শিখে ফেলে।

এই শেখাটা তখন খুব দ্রুত হয়ে যায়, যখন অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে বারবার দেখা হয়। আর এই অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে দেখা হয়ে সে যদি বেঁচে যায়, তখন তার একটা স্মৃতি তৈরি হয়। এই যে বেঁচে থাকার দক্ষতা তৈরি হয়, সেটি তার পরবর্তী প্রজন্মকে এবং পাশের প্রজন্মকে জানিয়ে দেয়। এই জানানোর কিছু জেনেটিক পদ্ধতি আছে।

একটি ব্যাকটেরিয়া যখন বেঁচে থাকার পদ্ধতি শিখে যায়, তখন এই দক্ষতাটি ছড়িয়ে দেয় লক্ষ-কোটি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে। এরপর যখন লক্ষ-কোটি ব্যাকটেরিয়া একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার সক্ষমতা অর্জন করে, তখন সে ওষুধটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে- অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলা অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াটি বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করে ফেলা।

কোভিডের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি আমরা কত অসহায়। এই কোভিডের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট যেটা হওয়ার কথা ছিল পাঁচ বছর পরে, সেটা ঘটবে তিন বছর আগে। আমরা দেখবো- আর দুই-তিন বছর পরে আরেকটি মহামারী মোকাবেলা করছি। যেটা আমরা বলবো- অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মহামারী।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একই সঙ্গে আরেকটি ঘটনা ঘটবে। আমরা এখন সকল সম্বল দিয়ে দিয়েছি ভ্যাক্সিন ও অ্যান্টিভাইরাল গবেষণায়। দেখা যাবে, পৃথিবীজুড়ে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল আর অ্যান্টিফাংগাল ড্রাগের একটা চরম অভাব পড়বে। যার ফলে সকল মানুষ দেখবে, ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসগুলো রেজিস্ট্যান্স হয়ে উঠেছে। অথচ দেখা যাবে, আমাদের হাতে তখন কোনো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাংগাল ড্রাগ নেই। সুতরাং বেশি ভয়াবহ মহামারী হিসেবে আরও যেগুলো আসতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।

অতএব সচেতনতা আমার-আপনার পর্যায়ের নয়, সচেতন হতে হবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মহলের। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সকল সংস্থা এটিকে মানবজাতির জন্য একটা সর্বোচ্চ হুমকি বলে মনে করছে। অতএব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে পৃথিবীর সকল মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। আর এজন্য প্রথমে সবার এর ভয়াবহতা অনুধাবন করা দরকার।

এজন্য মানুষ যে অসতর্কভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে আর বিজ্ঞান সম্মতভাবে যতটুকু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয় পাওয়া দরকার, ততটুকু ভয় বা ভয়াবহতা মিডিয়াসহ সমস্ত প্রচারমাধ্যম, সমস্ত মানুষের কাছে যদি না যায় তাহলে মানুষ সতর্ক হবে না।

সবাইকে বলতে চাই- এটি শুধু আমার-আপনার সচেতনতা নয়, বরং চারপাশের সকল মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, কোভিড-১৯ এর পরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হবে পরবর্তী মহামারী।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু

বিভাগীয় প্রধান

ফার্মাকোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


আরও দেখুন: