বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে যেসব প্রতিকূলতা রয়েছে
বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে যেসব প্রতিকূলতা রয়েছে
আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, আমাদের কাছে যেসব কিডনি রোগী আসছেন, তাদের ডোনার নেই। অথচ তারাই কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশে বা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে আসছেন।
তাদের তথ্য নিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডোনারটাকে বানিয়ে নিয়ে গেছেন। বিদেশে হয়তো অন্য জাতির জন্য এতোটা শক্তভাবে পরিচালনা করা হয় না।
এই ট্রান্সপ্লান্টগুলো কি আমরা আমাদের দেশে করতে পারতাম কি না? প্রশ্নটা এখানে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা ডোনারকে টাকা দিয়ে আত্মীয় বানিয়ে বিদেশে নিয়েগিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করছে।
আমার কাছে এমনও খবর আছে, একজন হিন্দুকে তাকে মুসলিমের আত্মীয় বানিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে। এমন অনেক উদারণ আছে।
এই কিডনি ট্রান্সপ্লান্টগুলো যদি আমাদের দেশে করতে হয়, তাহলে একটা সরকারি মধ্যস্থতার মাধ্যমে করা যেতে পারে। এখানে কেউ যদি ডোনেট করতে চাই, তার দুটি কিডনিই ভালো আছে, সুস্থ আছে, ভবিষ্যতে তার যদি কোনো কিডনি রোগ হলে আমরা চিকিৎসাসেবা দেব। এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু এটা করা সম্ভব। এটা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হবে। তা কমিশনের মাধ্যমেও হতে পারে। এটা খুবি সততার সাথে করতে হবে, যাতে ডোনার এবং রোগী কেউ যাতে প্রতারিত না হয়।
কিডনি প্রতিস্থাপনে চিকিৎসকদের প্রতিকূলতা
এখানে যারা সার্জারি করেন তাদের নিরাপত্তা আসলেই অনেক কম। রোগীরা ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে ফেললে তার জন্য দায়-দায়িত্ব ডাক্তারকে বহন করতে হবে। চিকিৎসকের কোর্টে কোর্টে ঘুরতে হবে, তার লাইসেন্স বাতিল হওয়ার আশংকা থাকবে, হাসপাতালেরও লাইসেন্স বাতিল হওয়ার আশংকা থাকে। বাংলাদেশে এমন আর কোনও সার্জারি নাই যেখানে এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।
ফলে আগে সার্জারি করাতেন এমন অনেক চিকিৎসকও এই সার্জারি থেকে পিছিয়ে আসছেন। এজন্য নিরাপত্তা আর জোরদার করা প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশের অনেক চিকিৎসক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে নিরুৎসাহ হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলছেন, রোগীরা যদি কোন মিথ্যা তথ্য দেন, এই অবস্থায় যদি সার্জারি হয়ে যায়। তাহলে সেটার দায় চিকিৎসকের উপর বর্তায়। আবার অনেক সময় প্রদান আসামি হয়ে যান চিকিৎসক।
কিডনি সার্জারিতে সফলতা ও ঝুঁকি
কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট দেশে একটা বড় অপারেশন। এর সফলতাটাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। একটা সার্জারি করতে প্রায় ৬ ঘণ্টা লেগে যায়। তার আগে ও পরে অনেক প্রস্তুতিও আছে। সার্জারি পরবর্তীতে যে ১৪ দিন কেটি আইসিইউতে ফলোআপে থাকে, সেখানেও কিন্তু বড় বোঝা থেকে যায়। এসব রোগীদের ম্যানেজ করা নিয়ে। এসব দিকগুলো থেকে চিন্তা করলে এটা একটি বিশাল কাজ। এই কাজটি আরও বৃদ্ধি করতে হলে দক্ষ জনবলসহ দক্ষ ব্যবস্থাপনারও দরকার হবে।
সরকারের করণীয়
আমাদের দেশে কিডনি কেনাবেচা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই প্রতারনাটাকে আমরা যদি কমিয়ে আনতে পারি, তাহলে পরে কমিশনের মাধ্যমে বিদেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট কমিয়ে আমাদের দেশে ট্রান্সপ্লান্ট বৃদ্ধি করা সম্ভব। এখানে সরকারকে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। কোনো বেসরকারি সেক্টরকে এই দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সরকারে নিজেস্ব এবং একটা শক্তিশালী বডি দিয়ে এটা পরিচালনা করতে হবে। এরকম কয়েকটা দেশেও আছে।