হরমোনের সঙ্গে ডায়াবেটিস-থাইরয়েডের সম্পর্ক জানা কেন জরুরি?

ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন
2021-08-15 20:33:14
হরমোনের সঙ্গে ডায়াবেটিস-থাইরয়েডের সম্পর্ক জানা কেন জরুরি?

যেকোনো কারণেই হরমোনের রোগ হতে পারে। হরমোন কমে যাওয়া এবং হরমোন বেড়ে যাওয়া দুই ধরনের রোগ হতে পারে।

হরমোনের রোগ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। হরমোন হলো এক ধরনের রক্তরস, যেটা শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে রক্তের মাধ্যমে সমস্ত শরীরে কাজ করে।

অনেকের ধারণা হরমোন মানে শুধু ছেলে হরমোন, মেয়ে হরমোন। কিন্তু আসলে হরমোন আরও অনেক রকমের আছে। শরীরের সমস্ত ধরনের সিস্টেমের কাজকে সমন্বিত করার দায়িত্ব হচ্ছে হরমোন সিস্টেমের। আমাদের জন্ম, গ্রোথ তথা বেড়ে ওঠা, লম্বা কিংবা খাটো হওয়ার কাজগুলো সুনিপুণভাবে সুসম্পন্ন হওয়া- এই সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে হরমোনের অবদান।

যেকোনো কারণেই হরমোনের রোগ হতে পারে। হরমোন কমে যাওয়া এবং হরমোন বেড়ে যাওয়া দুই ধরনের রোগ হতে পারে। তাহলে হরমোনের কি কি রোগ আছে। এরকম প্রশ্ন যদি আমাদের মনে চলে আসে তাহলে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত হরমোনের রোগ হলো ডায়াবেটিস‌।

আমাদের পেটের ভেতর থাকে প্যানক্রিয়াস বাংলায় বলে অগ্নাশয়। এখান থেকে ইনসুলিন নামের হরমোন তৈরি হয়। ইনসুলিন হরমোনের কাজ হলো আমাদের খাবার থেকে যে গ্লুকোজ তৈরি হয়, সেটাকে ভেঙে শক্তিতে পরিণত করা। শরীরে কোনো কারণে ইনসুলিন কমে গেলে, না থাকলে অথবা ইনসুলিন কম কাজ করলে শরীরের গ্লুকোজ ভেঙে ঠিক মতো শক্তি তৈরি হয় না। এ রোগের নাম ডায়াবেটিস। সুতরাং ডায়াবেটিস আমাদের একটা পরিচিত হরমোনের রোগ।

এরপরে রয়েছে থাইরয়েডের রোগ। এই রোগের সাথেও অনেক মানুষ পরিচিত। থাইরয়েডের রোগও দুই ধরনের হয়। একটা হচ্ছে- থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়া। এটাকে বলে হাইপোথাইরোয়েডিজম। আর থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে এটাকে বলে হাইপার থাইরয়েডিজম।

এই দুটি রোগের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজম অনেক কমন। পুরুষ রোগীদের তুলনায় মহিলাদের এই রোগ বেশি হয়। এই রোগ মহিলাদের মাসিকের পরিমাণ, সময় ও ধরন এগুলোর ওপর এফেক্ট করে। এগুলোতে পরিবর্তন হয় বলে রোগীরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, গাইনোকোলজিস্টের কাছে আসেন। তারপর যখন হরমোনের রোগ ধরা পড়ে তখন তারা হরমোনের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে যান।

হাইপোথাইরয়েডিজম রোগের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ রোগীকে সারাজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। এই চিকিৎসা হচ্ছে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট অথবা হরমোন সাপ্লিমেন্ট। যে হরমোন শরীরে কম তৈরি হয়, সেটা আমরা বাইরে থেকে মেপে মেপে দিয়ে দিই। এডজাস্ট করে দেই। যখন কেউ হরমোনের চিকিৎসা নেন এবং তার চিকিৎসার রিপোর্টগুলো স্বাভাবিক মাত্রার কাছাকাছি থাকে, তখন একজন স্বাভাবিক মানুষ এবং সেই রোগীর মধ্যে সুস্থতার দিক থেকে বা তার অন্যান্য বিষয়গুলোতে কোনো পার্থক্য থাকে না।

মেয়েদের হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকে যে, তাদের ভবিষ্যতে গর্ভধারণের কোনো সমস্যা হবে কিনা, গর্ভপাত হবে কিনা, বাচ্চার কোনরকম জন্মগত ত্রুটি হবে কিনা। এক্ষেত্রে উত্তর- না, আল্লাহর রহমতে চিকিৎসার মাধ্যমে রিপোর্টগুলো যদি নরমালের কাছাকাছি থাকে, তাহলে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয় না বলে আশা করা যায়।

তবে যাদের হাইপোথাইরয়েডিজম আছে তাদের এই রোগের পাশাপাশি অন্য কোনো রোগ আছে কিনা সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীদের ওজন কমে যায়, অস্থির লাগে, গরম লাগে, ঘাম হয়, বুক ধড়পড় করে, ক্ষুধা লাগে বেশি। এই রোগ থেকেও কারো কারো ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এই লক্ষণগুলো থাকলে ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া যেকোনটাই থাইরয়েডের কারণে হতে পারে। সুতরাং এই দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।

এছাড়া মেয়েদের ক্ষেত্রে আরেকটি কমন রোগ হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, পিসিওএস। এই রোগটি সাধারণত সে সব মেয়েদের হয় যাদের ওজন বেশি। কিন্তু নরমাল ওজনের মেয়েদেরও এই রোগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কারা এটার ভুক্তভোগী হতে পারেন, যাদের বংশে ডায়াবেটিস আছে। তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। পিসিওএস এই রোগের ক্ষেত্রে মাসিকের গণ্ডগোল হয়, সময়মতো মাসিক না হওয়া, মুখে-শরীরে লোম বেড়ে যাওয়া, ব্রণ বেড়ে যাওয়া, মাথার চুল পড়ে যাওয়া এবং বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণে অসুবিধা হতে পারে। যাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকে তাদেরও প্রিডায়াবেটিস, ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেজন্য আমাদেরকে সাবধানে থাকতে হবে।


আরও দেখুন: