দৈনিক সংক্রমণ ২৫ হাজার আর মৃত্যু ৫০০ ছাড়াতে পারে
দৈনিক সংক্রমণ ২৫ হাজার আর মৃত্যু ৫০০ ছাড়াতে পারে
আমি লকডাউন শিথিলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হইনি। কারণ, আমার মনে হচ্ছে, সরকারের তো নিজস্ব একটা হিসাব-নিকাশও আছে। এই হিসেবে ধর্মীয় আবেগ এবং আমাদের বাণিজ্যিক বা অর্থনীতিকে সমন্বয় করার জন্য সরকার হয়তো লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা আমি মনে করছি।
এ সময় যদি সরকার চারটা কাজ দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে, তাহলে আমি বলবো যে সরকারের সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল।
এক. অ্যান্টিজেন বা ডায়াগনোসিসের কিট দেশের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া এবং করোনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে ফেলা।
দুই. টিকা সব জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।
তিন. সরকার একটা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে হতদরিদ্রদের জন্য। প্রতি পরিবারে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া। এটা এ সপ্তাহের মধ্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
চার. আমাদের জীবন আচরণে যে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে (যেমন- বাইরে গেলে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজাই রাখা), সেটা বাস্তবায়নে সরকার যেন সক্ষমতা দেখাতে পারে।
এই চারটি কাজে সরকার যদি সফল হয়, তাহলে আমি বলবো- লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত ছিল। কিন্তু যেখানে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী- সরকারি হিসাবে দুইশ’র ওপরে মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক জায়গায় শনাক্তের হার ৪০ শতাংশেরও বেশি। এমন সময় বিশ্বের আর কোনো দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কাজেই এই সিদ্বান্তে আমি অত্যন্ত ব্যাথিত এবং খুব বিস্মিত হয়েছি। আমার আসলে ব্যক্তিগতভাবে এটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু আমি আগেই বলেছি, ওপরের চারটি কাজ যদি সরকার সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে আমার ব্যথিত হওয়া বা বিস্মিত হওয়ার মধ্যেও আমি বলবো যে, সরকারের একটা ভালো উদ্দেশ্য ছিল এবং সরকার সেই ভালো উদ্দেশ্যে সফল হয়েছেন।
কোন দিকে যাবে সংক্রমণের গতি?
লকডাউন শিথিলের ফলে সংক্রমণের গতি আরও অনেক বাড়বে। আমার আশঙ্কা- আগস্টের প্রথমার্ধে আমরা দেখবো যে, প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ২০-২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন ৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবিই বেশি। আমাদের জন্য খুবই দুঃখের একটা ঘটনা ঘটবে।
আমি আসলে জানি না সরকারের কি অত্যন্ত বিজ্ঞ একটি কার্যকরী টিম আছে কিনা, তারা এই জিনিসগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন কিনা। নাকি সরকার শুধু মাত্র ব্যবসায়ীদের (অর্থ ব্যবসায়ী, ধর্ম ব্যবসায়ী) চাপে পড়েই অবৈজ্ঞানিকভাবেই সিদ্ধান্তগুলো নেন। এই বিষয়গুলো আমার কাছে পুরো পরিষ্কার নয়।
দিন দিন যেভাবে মৃত্যুর হার বাড়ছে। সরকারি হিসেব মতে গত পাঁচ দিন ধরে দুইশ’র ওপরে মৃত্যু হচ্ছে। এই পরিপেক্ষিতে লকডাউন আরও কঠোরভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এর সঙ্গে আইনি বাধ্যবাধকতাগুলো আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত ছিল। এটা করলে আমাদের দৃষ্টিতে বেশি যুক্তিসংগত পদক্ষেপ হতো।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম। আর মুসলিমদের বড় একটি আনন্দের উৎসব হলো ঈদুল আজহা। কিন্তু এবারের ঈদটা স্বল্প পরিসরে পালন করার জন্য সরকারে পক্ষ থেকে বোঝানো উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। কারণ, সৌদি আরব, ইরাক, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে কিন্তু কোরবানির ঈদ স্বল্প পরিসরে পালন করার কথা বলা হয়েছে।
আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ কিন্তু অনেক বোঝেন। ধর্মীয় রীতিনীতি এবং কোন জায়গায় আমাদের কতটা ছাড় দেওয়া সম্ভব- এগুলো আমাদের সাধারণ শিক্ষিত মুসলিমরা অবগত আছেন। কাজেই আমার মনে হয় তাদের বোঝানো হলে, তারা সহজেই এই বিষয়গুলো মানতে পারতেন।