স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দে বিবেচনায় নিতে হবে দুই চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দে বিবেচনায় নিতে হবে দুই চ্যালেঞ্জ
দেশের স্বাস্থ্যখাত এখন দুটি চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। একটি হলো- করোনায় আমাদের সামনে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। আর অপরটি হলো- আমাদের পুরোনো কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এখন বাজেটে এই দুটি বিষয় থাকতে হবে। করোনা মোকাবিলায় যেসব প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেসব বিষয় মাথায় রাখা। এটা হলো স্বল্পমেয়াদি।
আর কিছু দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাতো আমাদের স্বাস্থ্যখাতে আছে। যেমন- আমরা যে চিকিৎসা সেবা নিই, সেটার ব্যয়টা আমাদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে। এখানে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কিন্তু আমাদের (রোগীদের) পকেট থেকে যায়। স্বাস্থ্যখাতের এই বিশাল ব্যয়ের কারণে অনেকেই কিন্তু দরিদ্র হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটা হিসাব বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয় শুধু স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের মেটাতে গিয়ে।
এ জন্য স্বাস্থ্যখাতের বাজেটে পুরোনো যেসব সমস্যা আছে, সেগুলোও যেমন মাথায় রাখতে হবে; তেমনি করোনা মহামারীর কারণে নতুন যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি- আগের বছরে যা বাজেট ছিল, পরের বছরে এসে তার থেকে কিছু বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা কেন হয়? এর পিছনে যদি দেখেন তাহলে দেখবেন, এতে বাজেট করতে সুবিধা হয়।
বাজেটগুলো কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত আসে। এখানে কার্যকরভাবে বাজেট করা অনেক কঠিন। আমার মনে হয়, এখানে সেই চ্যালেঞ্জটা কেউ নিতে রাজি হচ্ছে না। আরেকটা বড় সমস্যা খরচ করতে পারছে না।
চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী বাবদ চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত ৪৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। আগামী অর্থবছরেরও ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। করোনায় সেবা দিতে গিয়ে কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ বাবদ গত অর্থবছরে পরিপত্র জারি ৭৫০ কোটি টাকা। এর পরেও অসন্তোষ থাকছে কেন?
এখানে খুব পরিষ্কার একটা বার্তা দেয় যে, বাজেট বরাদ্দ হলেই চলবে না। আমি বলবো এটা একটা শিক্ষা। বাজেট দিলাম তাতেই কিন্তু সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। আরও অনেক বিষয় আছে। কী কারণে তারা পাচ্ছে না? কোথায় তারা আটকে আছে? কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তারা আটকে আছে? এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। কারণ এসমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারলে, শুধু বাজেট দিয়েই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। সমস্যা থেকেই যাবে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা
সরকার বা মন্ত্রণালয় হয়তো চাচ্ছে গবেষণা হোক। কিন্তু গবেষণাটা করবে কারা? মন্ত্রণালয়ের লোক তো আর গবেষক নন। এখানে গবেষণা করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বা কোনো রিচার্স হাউজ। এখানে একটা যোগাযোগ দরকার, যেটা কিন্তু হচ্ছে না। আমার বিভিন্ন গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখানে সরকার অন্যান্য কন্ট্রাক্টের কাজের মতো করে গবেষণটাকে নিচ্ছে, যার কারণে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো আছে তারাই কাজটা পাচ্ছে। যার কোয়ালিটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই কাজগুলো করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না।
গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা কারা নির্ধারণ করবে? এই যে কমিটিগুলা হয়েছে, চিকিৎসক বা সরকারি আমলা, যাদের গবেষণার সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নাই। মেডিকেল পেশায় যারা আছেন, তারা সবাই কিন্তু গবেষক না। এর সঙ্গে গবেষণার যে পরিধি, সেটাও পরিষ্কার নয়।
স্বাস্থ্যখাতের জবাবদিহিতা
করোনাকালে অনেকগুলো কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাত আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। তাই আমি বলবো, জবাবদিহিতা উন্নত করার অনেক সুযোগ আছে। প্রথমত করোনাকালে যে বুলেটিনটা দেওয়া হয়, সেখানে এখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে পারে না। আপনাকে প্রশ্ন করতে দিতে হবে। অন্যথায় আপনি জবাবদিহিতায় আনতে পারবেন না।
প্রথমের দিকে বিভাগ বা জেলাতে করোনার তথ্যগুলো দেওয়া হতো, কিন্তু এখন আর ওই রকমভাবে দেওয়া হয় না। তথ্যগুলো সবসময় সহজ করতে হবে। কারণ তথ্যগুলো সহজ হলে বুঝা যাবে কোথায় দুর্বলতা আছে। আর দুর্বলতাগুলো যখন বুঝতে পারবেন, তখনই সেটা সমাধান করতে পারবেন।
আমাদের এখন যে বাস্তবতা সেটা হলো- আমাদের যদি কোনো তথ্য লাগে, সেটা সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। এখানে তাদের মনে চাইলে দিবে, না চাইলে নাই। বিষয়টা এমন হয়ে গেছে। আমার মনে হয়ে, এটা উল্টে দেওয়া উচিতা। আপনাকে কথা শুনতে হবে, কথার জবাব দিতে হবে। তা না হলে সরকার খারাপ কাজ করলে যেমন সমালোচনা হবে, তেমনি ভালো কাজ করলেও তার সমালোচনা হবে। কাজেই তথ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।