৮ নিয়মে মিলবে কিডনির সুরক্ষা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না
মানবদেহে সাধারণত এক জোড়া কিডনি থাকে। বড় কলাই আকৃতির কিডনি দুটি দৈর্ঘ্যে ৯-১২ সেন্টিমিটার; প্রস্থে ৫-৬ সেন্টিমিটার ও ৩-৪ সেন্টিমিটার মোটা হয়। মেরুদণ্ডের দুই পাশে কোমরের একটু উপরে এদের অবস্থান।
প্রাথমিক অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। লক্ষণ যখন দেখা যায়, তখন কিডনি শতকরা ৭০ ভাগ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
দুটি সহজ পরীক্ষায় কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়। ১. মূত্র পরীক্ষায় আমিষের উপস্থিতি দেখা ও ২. রক্ত পরীক্ষায় ক্রিয়োটিনিনের মাত্রা দেখা।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কিছু লক্ষণ হলো, শরীর ফুলে যাওয়া, ক্লান্তিবোধ করা, মনোযোগহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য ও ফেনাযুক্ত প্রস্রাব হওয়া।
কিডনির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি কিডনির মেডিসিন বিষয়ক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তাকে আমরা নেফ্রোলজিস্ট বলি। আর কিডনির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি কিডনির সার্জিক্যাল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তাকে বলি ইউরোলজিস্ট।
কাদের সতর্ক হতে হবে
১. আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
২. উচ্চ রক্তচাপ
৩. স্থূলতা
৪. ধূমপানের অভ্যাস
৫. অধিক বয়স (৫০ বা তদূর্ধ্ব)
৬. পরিবারে কারো কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সতর্ক হতে হবে।
সুরক্ষায় মেনে চলুন ৮ নিয়ম
১. নিজেকে সবল ও কর্মব্যস্ত রাখুন
২. রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
৩. রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন
৪. সুষম খাদ্য খান এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখুন
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
৬. ধূমপান পরিহার করুন
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন
৮. আপনি যদি কিডনি ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে এক বা একাধিক কিডনি রোগ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করুন
কে আক্রান্ত হবেন?
১. পৃথিবীতে শতকরা ১০ জন মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন
২. কিডনি রোগ সকল বয়সের এবং সকল জাতিকে আক্রান্ত করতে পারে
৩. ৭৫ বৎসর বয়সের ৫০ শতাংশ মানুষ কমবেশি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতায় ভোগেন
৪. ৬৫-৭৫ বয়সের প্রতি ৫ জনে একজন পুরুষ এবং প্রতি ৪ জনে একজন নারী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
৫. উচ্চ রক্তচাপ এবং বহুমূত্র রোগ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের প্রধান কারণ
আপনি কি ঝুঁকিতে আছেন? তাহলে দেখুন, আপনার কি উচ্চ রক্তচাপ আছে? আপনি কি বহুমূত্র রোগে ভুগছেন? আপনার পরিবারের কারও কি কিডনি রোগ আছে? আপনার দৈহিক ওজন কি বেশি? আপনার কি জাতিগতভাবে আফ্রিকান, হিসপানিক বা এশিয়ান বংশধর?
আপনার উত্তর এক বা একাধিক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক, যা আপনার সুস্থ জীবন-যাপন বাধাগ্রস্ত করে। এখানে কিছু সহজ উপায় বলা আছে যা আপনাকে কিডনি রোগ থেকে রক্ষা করবে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকল হয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হচ্ছে। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, এ দেশে শতকরা ৫ ভাগ লোকেরও দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। সাধারণত ৭০ ভাগ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতেই পারে না যে সে ঘাতক ব্যাধিত আক্রান্ত। এই ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় অঙ্কুরেই কিডনি রোগ নির্ণয় ও কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা।
কিডনি বিকল প্রতিরোধের ১০টি উপায়
১. ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস কিডনি বিকলের প্রধান কারণ
২. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখা (HBAIC ৭ (সাত) এর নিচে)
৩. উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে (১৩০/৮০এর নিচে)।
৪. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের কিডনির কার্যকারিতা ও প্রস্রাবে মাইক্রো অ্যালবুমিন প্রতি ৬ মাস অন্তর পরীক্ষা করা
৫. শিশুদের গলাব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোসপাঁচড়ার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা করা উচিত
৬. ডায়রিয়া, বমি ও রক্ত আমাশয়ের কারণে রক্ত, পানি ও লবণ শূন্য হয়ে
কিডনি বিকল হতে পারে। তাই দ্রুত খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে
৭. ধূমপান বর্জন করুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন
৮. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথার ওষুধ সেবন না করা
৯. প্রস্রাবের ঘন ঘন ইনফেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে
১০. পাঁচ রঙের সবজি খাবেন, বেশি করে ফল খাবেন, চর্বি জাতীয় খাবার ও লবণ কম খাবেন ও পরিমিত পানি পান করবেন।