পরিবেশ বিষয়ে অসচেতনতা: হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
দিন দিন পরিবেশ এভাবে নষ্ট হতে থাকলে দেশের সাধারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য খাতে এর প্রভাব নিয়ে পুরোনো একটি লেখা প্রকাশ হয় ঢাকার গণমাধ্যমে। এরপর আমার অনেক বন্ধু আর্টিকেলটি পড়ে জানতে চাইছে সমস্যা তো তুলে ধরলাম, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কোথায়?
আর কেনই বা আমি বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন? একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যখ্যা করা যায়- ধরুন আপনি যদি COPD (ফুসফুসের সংক্রমণ) এর রোগী হন এবং নির্দ্বিধায় ধূমপান করতে থাকেন, তাহলে সবচেয়ে কে বেশি আতঙ্কিত হবেন? আপনি? নাকি আপনার চিকিৎসক? এক্ষেত্রে বেশি আশঙ্কিত হবেন আপনার চিকিৎসক। কারণ তিনি জানেন আপনারসমূহ কী ক্ষতি হতে পারে।
এ কারণেই আমি উদ্বিগ্ন যে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয় নিয়ে কিছুটা কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। মন্ত্রণালয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত কি পরিমাণ গবেষণা ও অর্থ লগ্নি করা হয়, তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।
বন্ধুরা প্রশ্ন করলেন এর সমাধান কোথায়? আমি কেন শুধু সমস্যা না দেখিয়ে সমাধানের পথ বাতলে দিচ্ছি? আমেরিকা ও কানাডায় যাদের প্রকৌশলী বা প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করা অভিজ্ঞতা আছে, তাদের জানা আছে এখানে কোনো বড় ধরনের ডিজাইন শুধু একক ব্যক্তির মাথা থেকে আসে না।
সমাধানটা আসে বিভিন্ন মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনা থেকে এবং এটাকে এখানে বলা হয় টিম ওয়ার্ক। সেই রকম বাংলাদেশের পরিবেশ ও আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকল্পে বিশিষ্ট জ্ঞানলব্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে একটা টেকটিক্যাল (Technical) কমিটি গঠন করে এর সমাধান বের করতে হবে।
বাংলাদেশে যা হচ্ছে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী ঘটতে পারে তার একটি নমুনা এমন হতে পারে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একজন বড় হোমরাচোমরা কর্তাব্যক্তি আছেন, তার পদবি সচিব। খুব সম্ভবত তিনি পরিবেশ বিষয়ে জীবনেও একপাতা পড়েন নাই; হয়তো পড়েছেন ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সাহিত্য ইত্যাদি।
আমার জানামতে এই বিদ্যাশিক্ষা দিয়ে আর ছোট ছোট গাইড বই পড়ে বিসিএস নামক পরীক্ষা দিয়ে এত সহজে বড় কর্তা হওয়া বোধ হয় বাংলাদেশেই সম্ভব! লোকেরা তাই বলে বাংলাদেশ নাকি সব সম্ভবের দেশ!
যাইহোক কানাডায় কোন মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তা হতে হলে তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। কানাডার মন্ত্রণালয়ে Auto-Promotion বা বদলি বলতে কিছু নেই। কোনো পদ খালি হলে প্রতিযোগিতা হবে। যদি আপনি যোগ্যতা অর্জন করেন, তাহলে আপনাকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে।
বিষয়টি এ নয় যে আপনি বহু বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাইরের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করার মানসিকতা নেই। তারা মনে করেন, তারাই সর্ববিশারদ। এরপর থাকে দীর্ঘসূত্রিতা। সময়ের কাজ সময়ে না করার প্রবণতা। এরপর যা-ই হলো তাও আবার জনগণকে জানাতে হবে কেন? জনগণ কে? তারা ভুলে যান জনগণই এদেশের মালিক।
পরিবেশ বিষয়ে বাংলাদেশের সমাধান
প্রথমত দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরামর্শ কমিটি করা দরকার। জনগণের মতামত নিয়ে একটা পরিবেশ গাইডলাইন তৈরি। পরিবেশ আদালত ও Penal code স্থাপন করতে হবে।
পরিবেশ বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কাজে সকলেই পরিবেশ সংক্রান্ত ট্রেনিং ও বিদ্যা জানা থাকতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশ বিষযে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য আব্দুলাহ আল মুতির শরফুদ্দিনের ‘মেঘ বৃষ্টি ঝড়’ বা ‘জমির খাদ্য’ বিজ্ঞানসম্মত গল্প সংযোগজন করে ছাত্র এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় শৈশব থেকেই পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করতে হবে। পরিবেশ উন্নত করতে হলে জনগণকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। দিন দিন পরিবেশ এভাবে নষ্ট হতে থাকলে দেশের সাধারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।
লেখক: এম কে আহম্মেদ উজ্জ্বল
সাবেক প্রকৌশলী, অন্টারিও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় মন্ত্রণালয়, কানাডা।
আরও দেখুন:
- ডক্টর-টিভি
- মেডিকেল-কলেজ
- স্বাস্থ্যসেবা
- পরিবেশ-বিষয়ে-অসচেতনতা:-হুমকির-মুখে-জনস্বাস্থ্য
- এম-কে-আহম্মেদ-উজ্জ্বল
- অন্টারিও-পরিবেশ-ও-জলবায়ু-পরিবর্তন-বিষয়-মন্ত্রণালয়
- পরিবেশ-ও-জলবায়ু-পরিবর্তন