রক্তচাপ কী, কখন উচ্চ রক্তচাপ হয়?
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ফলে স্ট্রোক, কিডনির ঝুঁকি, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি) হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
রক্তের চাপ সঠিকভাবে পরিমাপ করাটার গুরুত্ব খুব বেশি। কারো রক্তচাপ যদি সঠিকভাবে মাপা না হয়, তাহলে তাকে সঠিক ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। ধরুন কারো রক্তচাপ অনেক বেশি। এখন কেউ তার রক্তচাপ পরিমাপ করতে ভুল করলো। ফলে তার ওষুধের ডোজ কম দেওয়া হলো। ফলে দেখা যাচ্ছে- রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
এজন্য উচ্চ রক্তচাপের সঠিক চিকিৎসার জন্য আগে দরকার সঠিকভাবে রক্তচাপের পরিমাপ করা। তাই বিশ্বব্যাপী সঠিকভাবে রক্তচাপের পরিমাপ করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে আমরা রোগীকে অনাকাঙ্ক্ষিত ওষুধের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। আবার যার জন্য যে ওষুধটি দরকার বা যার জন্য যে খাদ্যাভাস, সেটা চিকিৎসকরা দিতে পারেন।
রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ফলে তার টার্গেট অর্গান নষ্ট (স্ট্রোক, কিডনির ঝুঁকি, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি) হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তাতে করে অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রোগীকে রক্ষা করতে পারি। সুতরাং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা সেটা খুবিই গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তচাপ কী এবং কখন এটি উচ্চ রক্তচাপ হয়?
আমাদের শরীরে যে রক্তনালী আছে, সেখানে সবসময় রক্ত প্রবাহিত হয় একটা নির্দিষ্ট চাপের মাধ্যমে। এই নির্দিষ্ট চাপের একটা স্বাভাবিক মাত্রা আছে। সেটাই হলো স্বাভাবিক রক্তচাপ। আর কোনো ব্যক্তির এই রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।
রক্তচাপ সবসময় একই রকম থাকে না। এটা পরিবর্তন হয়। একটা নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতর থাকলে আমরা সেটাকে স্বাভাবিক বলি। স্বাভাবিক মাত্রা বলা হয়, সিস্টোলিক ১৩০ মিলিমিটার মার্কারির নিচে। আর ডায়াস্টোলিক ৮০ মিলিমিটার মার্কারি অথবা তার কম।
আর সিস্টোলিক ১৩১-১৩৯ অথবা ডায়াস্টোলিক ৮১-৮৯ হলে সেটাকে বলা হয় হাই নরমাল। এরপরে ‘গ্রেড ওয়ান’ আর ‘গ্রেড টু’। গ্রেড ওয়ান হলো- সিস্টোলিক ১৪০-১৫৯ আর ডায়াস্টোলিক ৯০-৯৯ মিলিমিটার মার্কারি। এই দু’টি বা যেকোনো একটি এই মাত্রার ভেতর আসলেই তাকে আমরা বলবো ‘গ্রেড ওয়ান’। ‘গ্রেড টু’ হলো সিস্টোলিক ১৬০ বা এর বেশি আর ডায়াস্টোলিক ১০০ বা এর বেশি।
তবে রক্তচাপ বেড়ে গেলেই রোগীকে ওষুধ দেওয়া যাবে না। তার আগে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন- হঠাৎ করে কেউ যদি বাইর থেকে এসে রক্তচাপ পরিমাপ করেন, তাহলে তার কিন্তু রক্তচাপ বেশি দেখাবে। আবার অনেক সময় হঠাৎ করে দুশ্চিন্তায় পড়লে বা শরীরচর্চার কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে। তাই আমি বলছি, রক্তচাপ বেশি হলেই কিন্তু তাকে ওষুধ দোওয়া যাবে না। কী কারণে বাড়লো সেটা নির্ধারণ করে ওষুধ সেবন করাতে হবে। অনেক সময় দুই হাতের রক্তচাপ মেপে দেখার প্রয়োজন হয়। বুঝার জন্য যে দুই হাতেই রক্তচাপের পরিমাণ সমান আছে কিনা।
উচ্চ রক্তচাপ দুই প্রকার। একটি হল প্রাইমারি; যেটির ক্ষেত্রে কারণ জানা যায় না। সাধারণত আমরা বলি যে, পরিবারের কারো ছিল, সেখান থেকে হয়েছে। আরেকটা হল সেকেন্ডারি কারণ। যেমন- ধরুন, আমরা বলি অল্প বয়সে যাদের রক্তচাপ বেশি। এর মধ্যে কারো কিডনির সমস্যা, হরমোনের সমস্যা, কারো রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে। সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের এই কারণগুলো যদি নির্ধারণ করতে পারি তাহলে এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ বেশিরভাগ সময় কমিয়ে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এজন্য ওষুধের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ভেতর থাকতে হবে। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন বলতে আমি বুঝাচ্ছি- ওজনটা ঠিক রাখা, সুষম খাবার (শাক সবজি, কাঁচা ফলমূল এবং শস্যদানা জাতীয় খাদ্য) গ্রহণ করা। ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ না করা, পরিমিত শরীরচর্চা করা এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো। পাশাপাশি লাল মাংস (গরু, খাসির মাংস) এবং খাওয়ার প্লেটে বা পাতে আলগা লবণ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। তাহলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপের ফলে ঝুঁকি
অনেকে রক্তচাপটা নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারছেন না। কেউ কেউ মনে করেন, আমার তো কোনো লক্ষণ নাই বা কোনো উপসর্গ নাই অথবা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা চিকিৎসকের কাছে যান না। দীর্ঘদিন ধরে তারা যে রক্তচাপ রোগে ভুগছেন, কিন্তু তারা সেটা জানেন না। এর ফলে দুই-তিন বছর বা পাঁচ বছর পরে টার্গেট অর্গান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে স্ট্রোক, হার্ট নষ্ট, হার্ট অ্যাটাক বা কিডনি নষ্ট, এমনকি অন্ধত্ব বা রক্তনালী পচন ধরতে পারে। তখন চিকিৎসকের করার কিছুই থাকে না।