চিকিৎসায় সক্ষমতা থাকলেও সতর্কতা জরুরি
পার্শ্ববর্তী ভারতে করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, সেটি খুবই ছোঁয়াছে এবং চার থেকে পাঁচশ’ গুন সংক্রমণ বাড়াতে পারে। এটির প্রবেশ ঠেকাতে সরকার সীমান্ত বন্ধ রেখেছে। তারপরও আমাদের সতর্ক হতে হবে।
সতর্ক না থাকলে পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক হতে পারে। ভারত থেকে কেউ আসলে থানায় জানিয়ে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। এসব করা গেলে বাংলাদেশ থেকে করোনার প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
গত বছরের মার্চে করোনা শনাক্তের পর অনেক উন্নত দেশের মতো আমরাও সক্ষমতা বাড়িয়েছি। হাসপাতালের সংখ্যা এখন প্রায় ১৩০টি, যেখানে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে, আইসিইউ ও আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সরকার মাত্র ১৫ দিনে ৩ হাজার নার্স, ৩ হাজার চিকিৎসক, ৩ হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছে। করোনার কারণে ১১ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেল সরকার।
অন্য অনেক দেশের তুলনায় খুব ভালোভাবেই আমরা করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা সক্ষম, সেটি প্রমাণ করে গত দেড় বছর আমাদের দেশ থেকে কোনো মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যেতে পারেননি। দেশেই তারা সর্বোচ্চ সেবা পেয়েছেন। এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়, আমাদের দেশেই সব রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।
আমাদের অনেকগুলো সক্ষমতা থাকলেও করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে খুবই সতর্কতা জরুরি। গত নভেম্বরে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সে ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম। ফলে সেটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ডিএনসিসিতে ৮০০ শয্যা এবং ২০০ আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতলে ১০০টি করে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। আর অক্সিজেনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে করে নতুন কেউ আক্রান্ত না হয়। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সব জেলা-উপজেলায় হাইফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। কনভেনশন হল বা স্কুল-কলেজে উন্মুক্ত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি রাখতে হবে। এজন্য দেশের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে হবে। প্রত্যেক বিভাগে অক্সিজেনের প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে হবে। অক্সিজেন কন্টেইনার ব্যবহার করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তিন পদ্ধতিতে আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারি। প্রথমত, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। প্রত্যেককে এটি মানতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাস্ক সব সময় পরতে হবে। ঘরে-বাইরে যথা সম্ভব মাস্ক পরতে হবে। তৃতীয়ত, আসন্ন ঈদুল ফিতরে যতটা সম্ভব বাড়ির বাইরে বের না হওয়া। সম্ভব হলে ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে হবে।
দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময় অন্য কোম্পানির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন দেওয়া যায়, এমনটি বলেছে ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকরা। যদিও বিষয়টি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়। স্পেন বলেছে, ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়।
করোনা শনাক্তের পরীক্ষা বাড়ানোর সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে দুই ঘণ্টার মধ্যে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যতগুলো আরটিপিসিআর ল্যাব আছে, তার মাধ্যমে চাহিদা মাফিক পরীক্ষা করা সম্ভব। এর বেশি প্রয়োজন হলেও সরকার সেটি করতে পারবে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে টেলিমেডিসেনের মাধ্যমে শুরুতেই চিকিৎসা নিতে হবে। সেই সঙ্গে নিজেকে আইসোলেট করে ফেলতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৫ শতাংশ রোগীর জন্য আইসিইউ দরকার হয়। আর বাকি সবার ক্ষেত্রে হাইফ্লো ন্যাজাল দিয়ে অক্সিজেন দিলেই সাধারণত ভালো হয়ে যায়। এর মাধ্যমে গুরুতর রোগীরাও ভালো হয়ে যেতে পারে। আমাদের সব হাসপাতালে খুবই ভালো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং সব জায়গায় টেস্টের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে।
গত বছর একটি পরিবারে একজনের বেশি করোনা আক্রান্তের ঘটনা দেখা যায়নি। গত বছর জুন-জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৬৮ জন, ডিসেম্বরে ৪০ জনে নেমে এসেছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে করোনায় মৃত্যুহার তিনে নেমে এসেছিল, আক্রান্তের হার ছিল ৩০০-এর নিচে। এরপরই মানুষ অনেকটা অসচেতন হয়ে যায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাতে শুরু করে। ফলে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। এখন যেন একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয়। করোনা ভীতির চেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা বেশি জরুরি। প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব।