শ্বাসকষ্টে বাসা ও হাসপাতালে করণীয়
করোনা মহামারীর এই সময়ে মানুষ করোনাকে যতটা না ভয় পাচ্ছে, তার চেয়েও শ্বাসকষ্টকে বেশি ভয় পাচ্ছে। করোনার ফলে যে শ্বাসকষ্ট, এটা অনেক সময় ভয়ের কারণেও হয়। আবার এটি বাড়তে বাড়তে অনেক সময় আইসিইউ পর্যন্ত লাগতে পারে।
এই সমস্যার চিকিৎসাকে বলা হয়ে এক্সেলেশন অব অক্সিজেন থেরাপি। এতে আস্তে আস্তে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়বে এবং সেই অনুপাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে রক্তে ৯০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করা।
গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে এবারের আক্রমণের ধরণ অনেকটাই আলাদা। এবার খুব দ্রুতই একজন রোগীর অক্সিজেন দরকার হচ্ছে। অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে আসতে দেরি করছে। ফলে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না। আমরা দেখছি প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন হাসাপাতালে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
কোভিডের অনেকগুলো চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। রোগী কোন ধাপে আছে তার ওপর নির্ভর করছে রোগীর চিকিৎসা কেমন হবে। ক্লিনিক্যালি রোগীর চারটি ধাপ- মাইল্ড, মডারেট, সিভিআর, ক্রিটিক্যাল। অন্য ধরণের সংক্রমণটি হচ্ছে উপসর্গহীন সংক্রমণ।
বাসায় নিয়ে অক্সিজেন দেওয়া
অক্সিজেন নিজের বাসয় রাখার পর যদি মেডিকেল বা চিকিৎসক দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তাহলে সেটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এটা দেখার জন্য একজন চিকিৎসক থাকবেন এবং তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন যে কখন তাকে কতটুকু অক্সিজেন দিতে হবে। এটার জন্য অবশ্যই তাকে মেডিকেল সংস্পর্শে আসতে হবে।
কারণ হচ্ছে, একজন সাধারণ মানুষের দ্বারা এটা বোঝানো সম্ভব নয়। তবে নিয়ম হচ্ছে অক্সিজেন ঘনত্ব যদি ৯২ এর নিচে হয় তাহলে তাকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু যখন দেখা যাবে হঠাৎ করে কারো পালস অক্সিমিটারে ঘনত্ব ৯০ বা ৯১ পাওয়া যাবে, অথাবা কিছু রোগী আছে ভয় পেয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাহলে তাদের বড় ধরনের অক্সিজেন ঘাটতি নেই। তাদের অল্প অক্সিজেন দিলেই স্বাভাবিক হচ্ছে। তারপরেও বাসায় বসে অক্সিজেন দেওয়াটা অনেক ঝুঁকির।
মেডিকেল তত্ত্বাবধান ছাড়া অক্সিজেন দেওয়া অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটা ভয়ঙ্কর। কারো যদি অক্সিজেন স্যাচুরেশন বা ঘনত্ব ৮০ হয়; এরপর অক্সিজেন দেওয়ার পর সেটা ৯৫ এ পৌঁছালো। এসময় রোগী বুঝতে শুরু করবে যে তিনি বাসায় থেকে ভালো আছেন, এটাই তার জন্য ভয়ঙ্কর। তার সাময়িকভাবে ভালো লাগতে পারে, কিন্তু হঠাৎ যে কোনো সময় সেটা নেমে যেতে পারে। এমনকি ৫০ এর নিচে নেমে যেতে পারে। সে সময় যদি হাসপাতালে নিতে দেরি হয় তাহলে সেটিই মৃত্যুর জন্য বড় ঝুঁকি।
সুতরাং বাসায় একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া অক্সিজেন দেওয়া অনেক ঝুকিপূর্ণ। তবে যাদের মানসিক কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তারা অক্সিজেন দেওয়ার পরে বাসায় যেতে পারে। আমরা জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ীও এটা অনুমোদন করতে পারি না।
তবে সাধারণ যেসব কারণে শ্বাসকষ্ট হয় তাদের সবার ক্ষেত্রে না হলেও কারও কারও ক্ষেত্রে কোভিডের কারণ হতে পারে। এজন্য ঝুঁকি না নিয়ে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। অথবা তিনি নিজে অ্যাজমা বা হাপানির চিকিৎসা নেবে; কিন্তু পরিবারের অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলবে।
কারও যদি জ্বর ছাড়া কাশি বা সর্দি হয় অথবা সর্দি-কাশি ছাড়া জ্বর- যেটাই হোক তাকে কমপক্ষে ১০ দিন আইসোলেশেনে থাকতে হবে।
সরকারি হাসপাতলে পরীক্ষা করাটা অনেক কঠিন এবং এখানে আক্রান্ত হয়ে আসারও ঝুঁকি আছে। আর বেসরকারি হাসপাতালে অনেকটা ব্যয়বহুল। এজন্য পরীক্ষা না করলেও তাকে আইসোলেট করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে- করোনাভাইরাস এমন লক্ষণের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।