টিকা আমাদের কতটা সুরক্ষা দেবে
বাংলাদেশে প্রথম টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। ফাইল ছবি
অনেকের প্রশ্ন করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত, তাহলে কেনো আমরা দ্বিতীয় ডোজ নেবো এবং এই টিকা আসলে আমাদের কতটা সুরক্ষা দেবে? এই বিষয়টি একটু জটিল। সত্যিকার অর্থে টিকা নিয়েও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মানে কিন্তু আমরা এই কথা বলতে পারিনা, যে টিকাটা কাজ করছে না।
হেপাটাইটিস-বি টিকাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি টিকা এবং আমাদের দেশে অনেকিই স্বেচ্ছায় এটা নিচ্ছেন। এই হেপাটাইটিস-বি টিকাটি আমাদেরকে হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করে না। মানে টিকা নেওয়ার পরেও কিছু কিছু মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তাহলে কেনো আমরা এই টিকাটি নেবো?
আপনারা অনেকেই জানেন হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে ক্রোনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং লিভারের ক্যান্সার হতে পারে। তবে দেখা গেছে, যারা হেপাটাইটিস-বি টিকা নিয়ে থাকেন তাদের ভেতর হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণের হারটা অনেক কম। কিন্তু কেউ আক্রান্ত হবে না ধারণা ঠিক না। তবে আক্রান্তের হার অনেক কম অনেক কম এবং তাদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-বির যে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা (ক্রোনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং লিভারের ক্যান্সার) গুলো তাদের হয়না।
তার মানে যে কারণে পৃথিবী হেপাটাইটিস-বি কে ভয় পেতো, টিকা কিন্তু সেই কারণ থেকে রক্ষা করছে। একজন মানুষ হেপাটাইটিস-বি দিয়ে সংক্রমিত হয়ে কয়েক দিন জন্ডিস হয়ে ঘরে আটকা পড়ে যাওয়া এটা কিন্তু বড় সমস্যা না। বড় সমস্যা ছিল তার ক্রোনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং লিভারের ক্যান্সার হওয়া। এই টিকা কিন্তু ক্রোনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং লিভারের ক্যান্সারকে নিশ্চিত ভাবে প্রতিহত করছে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনা টিকাটি নেওয়ার পরে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের কিন্তু তীব্র করোনা হচ্ছে না।
আমার একটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ আছে, টিকা নেওয়ার আগে যারা করোনয় আক্রান্ত হয়ে বুকের সিটি স্ক্যান করাতেন তাদের প্রতেকের সিটি স্ক্যান পজেভি পেতাম যেখানে তীব্র কোভিডের পরিমাণ থাকতো। কিন্তু যারা টিকা নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিটি স্ক্যান করাতেন তাদের তাদের রিপোর্ট আসছে ফুসফুস পুরোপুরি পরিষ্কার। আর এই চিত্র পাচ্ছি শুধু যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু যারা টিকা নেন নাই তাদের ক্ষেত্রে তীব্র কোভিড পাওয়া যাচ্ছে।
তারপরেও টিকার প্রথম ডোজটা পুরোপুরি সুরক্ষা দেয় না, দ্বিতীয় ডোজটা দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে সত্যিকার সুরক্ষা দেয়। করোনাভাইরাসের যতো টিকা আছে সবগুলোর জন্য এটা সত্য।
আপনারা অনেকেই জানেন, আমাদের দেশে সাউথ আফ্রিকান ধরণটা ঢাকা শহরে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এই ধরণের বিপক্ষে টিকা কম কাজ করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, মৃদু এবং মাঝারি সংক্রমণের বিপক্ষে কম কাজ করে। তবে, তীব্র কোভিডের ক্ষেত্রে সেই সুরক্ষার অনেক বেশি।
অর্থনীতির ভাষায় একটা কথা আছে ‘অপরচুনিটি কষ্ট’, মানে একটা জিনিস আমাদের কাছে আছে কিন্তু সেটা দুর্বল। এখন আমরা যদি সেটা গ্রহণ করতে না পারি বা গ্রহণ না করি তাহলে, আমাদের কি হবে? এটাকেই বলা হয় ‘অপরচুনিটি কষ্ট’।
আমাদের হাতে একটা টিকা আছে, যে টিকাটি গত বছরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যতটা কাজ করতো, সেটি এই বছরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে তেমনটা কাজ করছে না। তাই বলে কি আমরা টিকা নেবো না? এখন তো আমাদের হাতে ভিন্ন কোনো জিনিস নাই। আমাদেরতো ‘অপরচুনিটি কষ্ট’। আমরা যদি মোটও টিকা না নেই এবং আমরা যদি করোনার নতুন ধরণে আক্রান্ত হয়, তা থেকে যদি আমাদের তীব্র করোনা হয়ে যায়, তাহলে আমাদের জন্য আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে যাবে। কাজেই আমি বলবো করোনা টিকাটি নতুন ধরণের বিপক্ষে কম কর্যকর হলেও টিকা না নেওয়ার ‘অপরচুনিটি কষ্ট’টা কিন্তু ভয়াবহ ক্ষতি এবং সেই ক্ষতিটা আমরা অ্যাফোট করতে পারবোনা।