করোনাকালে শিশুর যত্নে করণীয়

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা
2021-04-22 11:08:16
করোনাকালে শিশুর যত্নে করণীয়

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের বয়স আমাদের দেশে একবছর পার হয়ে গেল। এখানে আমরা গত বছরও দেখেছিলাম যেকোনো বয়সের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।  তবে গত বছর বিশ্বে বাচ্চাদের আক্রান্ত হারটা ছিল ৮/৯ শতাংশ। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে দেখা যায় যুক্তরাজ্যের ধরণটা আমাদের দেশে শনাক্ত হয়।

সাম্প্রতিক দেশে যেসব ধরনের করোনাভাইরাস আছে তার ভেতরে সাউথ আফ্রিকার ধরণটি আক্রান্ত করার ক্ষমতা বেশি। আর এই ধরণটি বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণ ও শিশুদেরও আক্রান্ত করছে।

গত বছর ভাইরাসের যে ধরণটি ছিল আমাদের দেশে তার এক রকম চরিত্র ছিল। আর বর্তমানের সাউথ আফ্রিকার ধরণটির চরিত্র আরেক রকম। যেটার আক্রমণ করার ক্ষমতা একটু বেশি। আর গত বছরের তুলনায় এবার বয়স্কদের সাথে তরুণদেরও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ সাউথ আফ্রিকার ধরণটির চরিত্র হলো সে যেকোনো বয়সের মানুষের আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে।

বর্তমান যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ফুসফুসের সিটিস্ক্যান করে দেখা যায়, ফুসফুসে তীব্র কোভিডের পরিমাণ, যেটা আগের ধরণের চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং এবারের এই ধরনটা নিয়ে আমাদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। কাজেই আমাদের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাটা জরুরি।

বর্তমান আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের যে ধরণটা আছে তাতে অর্গান ড্যামেজ (বিকলাঙ্গ) হয়ে যাওয়ার প্রবণতাটা বেশি। যার কারণে আমাদের একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

করোনার প্রভাবে জ্বর একটা প্রধান উপসর্গ। এর সাথে কাশি থাকে গলায় ব্যাথা থাকে। এর বাহিরে অন্য উপসর্গও থাকে। যেমন: অনেক সময় বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হয়, মুখের স্বাদ থাকে না, নাকে গন্ধ পাওয়া যায় না। কখনো তাদের নাক দিয়ে পানি আসে, নাক গন্ধ হয়ে যায়, শরীর দূর্বল হয়ে যায়, সমস্ত শরীরে ব্যাথা হয়।  কখনো কখনো তার শ্বাসকষ্ট হতে পারে আর এখানে আমাদের বেশি খেয়াল করতে হবে।

এই উপসর্গটা আগেও ছিল এবং এখনও কিন্তু আছে। এখন কোনো বাচ্চা যদি করোনায় আক্রান্ত হয় তাদের একটা জটিলতা দেখা যায় যেখানে ওই বাচ্চার শরীরের বিভিন্ন অর্গান আক্রান্ত হয়ে যায়। অর্গান আক্রান্ত হয়ে গেলে পরে দেখা যায় যে, বাচ্চা খুব অসুস্থ হয়ে যায়।

সাধারণভাবে যেসব বাচ্চারা করোনায় আক্রান্ত হয় তাদের ৮০-৯০ শতাংশ উপসর্গ পাওয়া যায় না। এখানে অনেক উপসর্গ খুব নরমাল আবার তাদের করোনা পজিটিভ। যেসব বাচ্চাদের জন্মগতভাবে হার্টের সমস্যা আছে, যেসব বাচ্চাদের শরীর অনেক মোটা, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা সবাই রিস্ক গ্রুপের মধ্যে পড়ে যায়। এসব বাচ্চারা আগে থেকেই একটা অসুস্থতা আছে এর ওপর আবার করোনায় আক্রান্ত হয় তাহলে অতি অল্পতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।

শিশুদের সুরক্ষা দিতে আমাদের একটা বড় দায়িত্ব আছে।  স্বাস্থ্যবিধিটা আমাদের সকলের মানতে হবে সাথে সাথে শিশুদের বুঝাতে হবে।

শিশুদের যেমন মাস্ক পরাতে হবে তেমন মাস্ক পরার গুরুত্বটাও বুঝাতে হবে। বাচ্চারা যদি কোনো জিনিসে হাত দেয় তারপর তাকে হাত ধোয়ার গুরুত্বটা বুঝাতে হবে। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে কিভাবে হাত ধুতে হয় তাকে সেটি শেখাতে হবে।

আর সব থেকে বড় বিষয় হলো সামাজিক দূরত্ব বা নিরাপদ দূরত্ব সেটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আর যারা বাইরে যান, তারা বাইরে থেকে ফিরে আগে নিজেকে পরিষ্কার করে বাচ্চার কাছে যেতে হবে।

এসব বিষয়গুলো বড়রাও মেনে চলবে একই সাথে ছোটদেরও বুঝিয়ে মেনে চলতে বাধ্য করাতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেভাবে বাড়াবেন

করোনা মোকাবেলায় এই সময়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ানো অতি জরুরি। তাহলে আমার মনে হয় বাচ্চাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে।

এজন্য শরীরের ইমিউনিটি বুস্টার বাড়াতে প্রথমে প্রয়োজন প্রোটিন। এখন আমাদের কাছে প্রোটিন সোর্স ৪টা (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল)।

দ্বিতীয়ত শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে প্রয়োজন ভিটামিন এ। আমরা আমাদের ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য প্রতি ছয় মাস পরপর ভিটামিন এ ক্যাপসুল দিয়ে থাকি। কিন্তু একই সাথে যেসব খাবারের মধ্যে ভিটামিন এ আছে সেগুলো খাওয়াতে হবে। যেমন: সবুজ শাক-সবজি, ছোট মাছের ভেতরে প্রচুর ভিটামিন এ আছে।

শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে তৃতীয় বিষয়টি হল ভিটামিন ডি এবং সি। ভিটামিন ডি থাকে কলিজার মধ্যে। খাবারে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বাড়াতে মাশরুমকে বেছে নিতে পারেন। তবে সূর্যের আলোতে বেড়ে উঠা মাশরুমে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বেশি থাকে। আর ভিটামিন সি পাওয়া যায় টক জাতীয় ফলের (কমলা, লেবু, জলপাই, মাল্টা, স্ট্রবেরি, আঙুর, বরই, জাম্বুরা, আমলকি ইত্যাদি) ভেতর।

সুতরাং, এই সময়ে আমরা যদি শিশুদের জন্য প্রোটিন এবং ভিটামিনগুলো নিশ্চিত করেতে পারি তাহলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 


আরও দেখুন: