টিকা না নিলে আমাদের জন্য আরও ভয়ংকর হবে
করোনা টেস্ট করতে আসা রোগীদের লাইন। ছবিটি রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের। ফাইল ছবি
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও জনগণের উদাসীনতার কারণে হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশি ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে। ফলে এখনই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে।
টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে নতুন মিউট্যান্ট আসতে থাকবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মর্ডানা বা ফাইজারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা উৎপাদনের গবেষণা শুরু করেছে। কয়েক মাসের মধ্যে হয়তো এসব টিকা আমাদের দেশেও আসবে। কিন্তু অব্যাহতভাবে স্বাস্থ্য বিধি না মানলে ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন আসতেই থাকবে।
টিকার প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যকার সময়ে কেউ সংক্রমিত হলো। তাহলে তার দেহের ভাইরাসটি ওই টিকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা সংস্করণ তৈরি করতে সক্ষম হবে। এভাবেই ইউকে, আফ্রিকান ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছে। এগুলো মূলত টিকার সিলেকটিভ প্রেসার।
মিউটেশন বা রূপ পরিবর্তন কীভাবে হয়?
আমাদের শরীরে অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো বংশানুক্রমে কিছু জিন বা ডিএনএ নামক রাসায়নিকের মাধ্যমে বাহিত হয়। এই জিন বা ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন হলে সেটিকে মিউটেশন বলা হয়। ডিএনএতে অনেকগুলো ভাগ আছে, কোনো একটি পয়েন্ট বা ভাগে যখন পরিবর্তন হয়ে অন্য বৈশিষ্ট্য আসে, সেটিকে পয়েন্ট মিউটেশন বলা হয়।
টিকা নেওয়ার পর আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে
আমরা দেখতে পাচ্ছি- করোনা টিকা নেওয়ার পরে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের কিন্তু তীব্র করোনা হচ্ছে না।
আমার একটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ আছে- টিকা নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা সিটি স্ক্যান করাতেন, তাদের রিপোর্ট আসছে ফুসফুস পুরোপুরি পরিষ্কার। আর এই চিত্র পাচ্ছি- শুধু যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু যারা টিকা নেননি, তাদের ক্ষেত্রে তীব্র কোভিড পাওয়া যাচ্ছে।
আর টিকার প্রথম ডোজটা পুরোপুরি সুরক্ষা দেয় না। দ্বিতীয় ডোজটা দেওয়ার পরে পুরোপুরি সুরক্ষা দেয়। করোনাভাইরাসের যতো টিকা আছে সবগুলোর জন্য এটা সত্য যে, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে সত্যিকার সুরক্ষা হয়।
আমাদের দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটা অন্তত ঢাকা শহরে প্রাধান্য বিস্তারকারী ধরন। এই ধরনের বিপক্ষে টিকা কাজ কম করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে- মৃদু এবং মাঝারি সংক্রমণের বিপক্ষে কম কাজ করে। তবে, তীব্র কোভিডের ক্ষেত্রে সেই সুরক্ষা অনেক বেশি।
আমাদের হাতে একটা টিকা আছে। যে টিকাটি গত বছরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যতটা কাজ করতো, সেটি এই বছরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে তেমনটা কাজ করছে না। তাই বলে কি আমরা টিকা নেবো না? এখন তো আমাদের হাতে ভিন্ন কোনো জিনিস নাই।
আমরা যদি মোটেও টিকা না নেই এবং আমরা যদি করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত হই এবং তা থেকে যদি আমাদের তীব্র করোনা হয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য আরও বেশি ভয়ঙ্কর হবে।