মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত হয়ে গর্ভবতী হওয়া নারীদের জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হয়

2020-09-20 03:41:47
মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত হয়ে গর্ভবতী হওয়া নারীদের জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হয়

প্রতীকী ছবি

একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই লক্ষাধিক মা- বোন লাঞ্ছিত হয়েছেন।  দেখা গেছে, অনেকেই তখন প্রেগন্যান্ট বা গর্ভবতী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তখন এমন একটা সংকট তৈরি হয়ে গিয়েছিল।  এমনই এক সংকটে তখন বঙ্গবন্ধু ওজিএসবি (অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।  এ বিষয়ে ডক্টর টিভিকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বর্তমানে ওজিএসবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করা অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. তানিয়া রহমান মিতুল

ডক্টর টিভি: ওজিএসবি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কিভাবে ভূমিকা পালন করেছিলেন?

অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী:  আমার আসলে এই ইতিহাসটা বলতে খুব ভালো লাগে।  আমাদের ওজিএসবি প্রতিষ্ঠার সাথে এত এত বড় মাপের একটা মানুষের স্নেহ সেখানে জড়িয়ে আছে সেটা ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে।  আপনারা অনেকেই জানেন, তখন (মুক্তিযুদ্ধে) প্রায় দুই লক্ষাধিক নারী এবং কিশোরীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

তাদের শারীরিক এবং মানসিক কষ্টের কোনো শেষ ছিল না।  যুদ্ধ শেষ কিন্তু তারা যখন ঘরে ফিরে যেতে চাইলো, ঘরে তাদের কেউ নিল না, সমাজ তাদের ফিরিয়ে দিল, পরিবার তাদের ফিরিয়ে দিল, তখন সে কোথায় যাবে?

তখন কিন্তু তাদের সে আশ্রয়ে এগিয়ে এলেন একজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হিমালয়ের মতো একদম এত বড় মাপের মানুষ।

বুক চিতিয়ে তাদের মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘লিখে রেখো ওদের (ধর্ষিতা নারীর পেটে জন্ম নেয়া সন্তানদের) পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।  তোমাদের ভয় কী? আমি তো আছি তোমাদের জন্য।’

এরকম কথা কে বলতে পারেন? সেসময় এদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সে সময়কার বড় বড় চিকিৎসকরা (যারা আমাদের শিক্ষক ছিলেন) ওজিএসবি নামের এই সংগঠনটি তৈরি করেন।

আর এই সংগঠনের মাধ্যমে ওনারা বিদেশ থেকে অনেক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসেন এ দেশে।  ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে এদেরকে কিভাবে ব্যবস্থা করতে হবে সেটার দিকে নজর দেন।  তার মধ্যে আমার যেটা মনে আছে, ফিগো আমাদের এপেক্স বডি, এটা হল অপস্টেটিশিয়ান গাইনোকোলজিস্টদের সবচেয়ে এপেক্স বডি, তাদেরকে আবেদন করা হয়েছিল আমাদের ওজিএসবি থেকে।

এখানে হল্যান্ড থেকে একজন আসছিলেন আমার ঠিক নামটা মনে নাই।উনি আমাদের তখন এ বিষয়ে ট্রেনিং দিয়েছেন কিভাবে এই নারীদের কষ্টের ভাগ নিয়ে তাদের কষ্টটাকে লাঘব করা যায়।তখন কিন্তু ওজিএসবি তৈরি হলো এবং তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল যে এই নারীদের পাশে দাঁড়ানো, এবং তারপর আমাদের ওজিএসবির প্রধান কাজ ছিল যে, মাতৃমৃত্যুর এবং নবজাতকের মৃত্যু কমানোর জন্য বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নেয়া।

আমি আবার ফিরে আসি সেখানেই, তখন যে শিশুরা জন্মগ্রহণ করলো, এটাও কিন্তু কঠিন একটা জায়গা, তাদেরকে নিয়ে এই যে যুদ্ধশিশু, এদের ভারটা কে নেবে?- সেটার সমাধান কিন্তু বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছিলেন এবং বিদেশে তাদের কিছু সংস্থা আছে,তাদের সাথে যোগাযোগ করে এমন একটা ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সমস্যা না হয়।  তাদেরও যেন জীবনটা ভালো হয় এবং এরাও যেন অসহায় না হয়। এভাবে উনি একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

আমাদের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের হাত নেই, পা নেই এদেরকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে অনেক বড় বড় সার্জনকে আনা হয়েছিল।  তখন খুব কঠিন একটা বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল।যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা তো চলে গিয়েছেন কিন্তু যারা যুদ্ধাহত ছিলেন তাদের চিকিৎসার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মান, ইন্ডিয়া, ফ্রান্স বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছিল।

শত শত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এরকম কাজ একমাত্র এরকম বড় মানুষের পক্ষে সম্ভব।  

বঙ্গবন্ধু আমাদের সেই সময়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের যে অধিদপ্তরের কথা, এটাকে শক্তিশালী করার যে একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেই সাথে মাতৃসদন, এখন যে সেগমেন্টালগুলো পেরিফেরিতে আছে , এগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা উনি করে গেছেন।

এখন আমার ভাবতে অবাক লাগে, প্রায় ৫০ বছর আগে তিনি যে চিন্তাভাবনা করেছিলেন, এখন তার সুযোগ্য কন্যা তার সেই স্বপ্নকে অনেকটাই বাস্তবায়ন করছেন।

এখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে আরেকটা ছিল বাংলাদেশ ন্যাশনাল নিউট্রিশন কাউন্সিল, স্বাস্থ্যের একটা মূল ভিত্তি হচ্ছে নিউট্রেশন। সে নিউট্রিশন এর জন্য ,সেই পুষ্টি ব্যবস্থাপনার জন্য তিনি কিন্তু একটা কাউন্সিল তৈরি করে দিয়েছিলেন।  আমার যতদূর মনে আছে ২৩ শে এপ্রিল হাজার ১৯৭৫ এ তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।  তখন থেকে কিন্তু ২৩ এপ্রিল থেকে ২৯ শে এপ্রিল পর্যন্ত নিউট্রিশন সপ্তাহ পালন করা হয় যাতে করে দেশে পুষ্টি নিয়ে একটা জাগরণ বা সচেতনতা তৈরি হয়।

 


আরও দেখুন: