Advertisement
Doctor TV

শুক্রবার, ৯ মে, ২০২৫


বিশ্বে এই প্রথম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড নিয়ে ১০০ দিন বাঁচলেন এক ব্যক্তি

Main Image

টাইটানিয়ামের তৈরি কৃত্রিম হৃদযন্ত্র। ছবি: বাইভাকর


সম্পূর্ণ কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এক অস্ট্রেলিয়ান ব্যক্তি। ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে টাইটানিয়ামের তৈরি সেই কৃত্রিম যন্ত্রটি তার নিরবচ্ছিন্ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান গবেষক এবং চিকিৎসকরা এই ঘটনাকে ‘বড় ক্লিনিক্যাল সাফল্য’ হিসেবে দেখছেন।  সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

 

কুইন্সল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ডঃ ড্যানিয়েল টিমস দ্বারা উদ্ভাবিত BiVACOR হলো সম্পূর্ণ কৃত্রিম একটি হৃদপিণ্ড। এটি বিশ্বের প্রথম ইমপ্লান্টেবল রোটারি ব্লাড পাম্প যা একটি মানুষের হৃদপিণ্ডের প্রতিস্থাপক হিসাবে কাজ করতে পারে। একটি সুস্থ হৃদপিণ্ডের প্রাকৃতিক রক্তপ্রবাহের প্রতিলিপি তৈরি করতে চৌম্বকীয় উত্তোলন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এতে। এই ইমপ্লান্টটি যা এখনও ক্লিনিকাল অধ্যয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, শেষ পর্যায়ের বাইভেন্ট্রিকুলার হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যা সাধারণত হার্ট অ্যাটাক এবং করোনারি হৃদরোগের কারণে সৃষ্টি হয়। তবে ডায়াবেটিসের মতো রোগ যা হৃদপিণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত বা দুর্বল করে দেয় সেক্ষেত্রে এটি রক্ত ​​পাম্প করতে পারে না।

 

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ২ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ হৃদরোগে ভোগেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান সরকারের মতে, মাত্র ৬,০০০ জন দাতা হৃদপিণ্ড সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাই  কৃত্রিম হৃদপিণ্ড  কর্মসূচির অংশ হিসেবে BiVACOR ডিভাইসটি তৈরি ও বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে অস্ট্রেলিয়ান সরকার। ইমপ্লান্টটি একটি সেতু হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে দাতার হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের জীবিত রাখা যায়, কিন্তু BiVACOR-এর দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হল গ্রহীতারা যাতে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন ছাড়াই তাদের ডিভাইসের সাথে বেঁচে থাকতে পারেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের ৪০ বছর বয়সী এই রোগী, যিনি তীব্র হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বের ষষ্ঠ কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের প্রাপক হওয়ার। যিনি গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন।


গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম পাঁচটি ইমপ্লান্ট করা হয়েছিল এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে সব রোগীরাই দাতা হৃদপিণ্ড পেয়েছিলেন। ইমপ্লান্ট এবং প্রতিস্থাপনের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ছিল ২৭ দিন। ২২ নভেম্বর সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে কার্ডিওথোরাসিক এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন পল জ্যান্সের নেতৃত্বে ছয় ঘন্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই অস্ট্রেলিয়ান রোগীর দেহে BiVACOR ডিভাইসটি প্রতিস্থাপন করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগীকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে BiVACOR স্থাপন করে  হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মার্চ মাসে একটি দাতার হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য উপলব্ধ হয়। জ্যান্স বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসা জগতে এটি একটি মাইলফলক। আমরা বছরের পর বছর ধরে এই মুহূর্তটির জন্য কাজ করে আসছি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই পদ্ধতিটি সম্পন্নকারী প্রথম দল হতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত।’


সেন্ট ভিনসেন্টের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্রিস হেওয়ার্ড, যিনি কয়েক সপ্তাহ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে থাকার পর ওই রোগীর পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে  দিয়েছিলেন, তিনি বলছেন , BiVACOR হার্ট আন্তর্জাতিকভাবে হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাড়া ফেলে দেবে। হেওয়ার্ড-এর মতে, আগামী দশকের মধ্যে আমরা দেখতে পাব যে BiVACOR এমন রোগীদের জন্য বিকল্প হয়ে উঠবে যারা দাতার হৃদপিণ্ডের জন্য অপেক্ষা করতে অক্ষম বা যখন দাতার হৃদপিণ্ড পাওয়া যায় না।

 

কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং হার্ট ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য ডেভিড কোলকুহাউন মনে করেন, কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতার সময়কাল - ১০০ দিনেরও বেশি। তবে একজন দাতার হৃদপিণ্ডের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা মেয়াদকাল ১০ বছরেরও বেশি (অথবা ৩,০০০ দিন)। এই কারণেই কৃত্রিম হৃদপিণ্ডকে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করার আগে "অনেক দীর্ঘ পথ" পাড়ি দিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমানে হৃদরোগের আধুনিক ওষুধ পাওয়ার কারণে প্রতি জনসংখ্যায় হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। ১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে হৃদরোগে মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ছিল। তৎকালীন ১ কোটি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ৪৭,০০০ অস্ট্রেলিয়ান হৃদরোগে মারা যান। এখন  ২০২২ সালে ২ কোটি ৬০ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে ৪৫,০০০ অস্ট্রেলিয়ান মারা গেছেন।

আরও পড়ুন