Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫


না ফেরার দেশে অর্থোপেডিক সার্জন ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলু

Main Image

বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলু


বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলু আর নেই। দীর্ঘদিন প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগে অবশেষে বুধবার (৫ মার্চ) ভোর ৫ ঘটিকায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রাজিউন। রংপুর মেডিকেল কলেজের ৮ম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলু।

 

রংপুর মেডিকেল কলেজের ৮ম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলু। 
 

তাঁর মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন তিনি। 

 

দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ ও অসুস্থ জীবন-যাপন করছিলেন ডা. হুমায়ুন রেজা বাবলু। 

 

তাঁর মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন পুলিশ হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. শিমু দিল আফরোজ। নিচে পাঠকদের জন্য তাঁর লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ 

 

একটা বিষয় শেয়ার না করে পারছিনা। সেই সকাল থেকে ইফতার, ইফতার থেকে তারাবি তারপর রাত বাড়ছে কিন্ত অসম্ভব মনের কষ্টটা চেপে রাখার চেষ্টা ব্যর্থতায় রূপ নিচ্ছে। আমি আজন্ম আস্তিক, বিশ্বস্ত এবং প্রচন্ড ভাগ্যে বিশ্বাসী একজন মানুষ। বরাবরের মতো আমার এই কথা শুনে হয়ত এবারও আপনারা অনেকেই হামলে পড়বেন আমার মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে। আমার পিতৃপরিচয় নিয়ে কথা বলতেও ছাড়েন না আপনারা, যদিও আমার গর্বের যায়গা কেবল এইটাই আর বাকী সব আমার কষ্টার্জিত অর্জন।
 

আবারও বলছি, আমি বিশ্বাস করি শান্তিটা কপালে লিখা থাকে। মেধা, যোগ্যতা, ক্যারিয়ার, টাকা, পয়সা দিয়ে শান্তি কেনা য়ায়না। ওটা সত্যিই কপালে লিখা থাকে।আজ খুব কাছ থেকে একজন সফল ক্যারিয়ারের ব্যক্তিকে বড় নিঃসঙ্গভাবে বিদায় নিতে দেখলাম। আমার রক্তের কেউ না। তারপরও কোথা থেকে তার জন্য এত কান্না আসছে আমি বুঝতে পারছিনা। তিনি আমার পরিচিত একজন চিকিৎসক।বিসিএসসহ উচ্চতর ডিগ্রী, সমমর্যাদার স্ত্রী, বাড়ি, গাড়ি, পুত্র, কন্যা সব ছিল কিন্ত কপালে সুখ লিখা ছিলোনা তার। ২০১৮’তে  তার একমাত্র চিকিৎসক ছেলে বগা লেকে ডুবে প্রাণ হারায়। এরপর তার গাইনোকোলোজিস্ট স্ত্রীকে খুব কমই বাইরে দেখেছে কেউ। একমাত্র কন্যা ইংল্যান্ড প্রবাসী। প্রস্টেট ক্যানসারে যখন আর পারছিলেন না তখন  Sma Alim  তাকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। দিনের পর দিন নিঃসঙ্গ বাবলু ভাইকে পরিবারের সদস্যের মতো সেবা করেছে প্রশান্তি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সহকারীরা।প্রত্যেকটা দিন আলীম সময় নিয়ে তার সাথে গল্প করতো। গতকাল রাতেও আলীমের সাথে তিনি তার মেডিকেল জীবনের অনেক গল্প করেছেন। হো হো করে হেসেছেন।অথচ আজ আর কোথাও তিনি নাই।
 

সব থেকেও কী ভীষণ একাকিত্ব গ্রাস করেছিল তাকে। হাসপাতালের বিছানায় দিনের পর দিন ছিলেন মৃত্যুর অপেক্ষায়। তাকে কেউ দেখতে আসতোনা কখনও। জানতেন কোথাও কেউ নাই তার জন্য ভাববার। কী ভীষণ নিষ্ঠুর মৃত্যুর অপেক্ষা আমি এর আগে কখনও দেখিনি।তার ছোট ভাই সাভার থেকে এসে ভাইয়ের লাশ বুঝে নিলেন। পরিবার, পরিজন, আত্মীয় বলতে কেবল এই ভাই। আপনারা যে বলেন, আপনাদের বাচ্চারা বুয়েট, মেডিকেলে পড়লেই সফল হয়ে যাবে। আমি কিন্ত তা বিশ্বাস করিনা।সেহরির পর থেকেই আলীম মন মরা হয়ে আছে। ডা. হুমায়ন রেজা বাবলু’ ভাই ছিলেন আলীমের পরম শ্রদ্ধেয় কাছের একজন। শুনলাম জানাযায় সহকর্মীরা অনেকেই কেঁদেছেন তার জন্য। এই রমজানে এমন একাকিত্বের পৃথিবী ছেড়ে, ভাই নিশ্চয়ই অনেক শান্তির স্হানে পৌঁছে গিয়েছেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন, ভাইকে কবরে সর্বোচ্চ আরাম ও শান্তিতে রাখুন। দয়া করুন।

আরও পড়ুন