Advertisement
Doctor TV

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫


উচ্চ রক্তচাপ ও রোজা পালন

Main Image

উচ্চ রক্তচাপ (ইনসেটে: ডা. মো. শফিকুর রহমান পাটওয়ারী)


রমজান মাসে রোজা পালন ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।  রোজা মুসলিম নর নারীর জন্য ফরজ বিশেষ কিছু  ক্ষেত্র ছাড়া। এবার রোজার সময় কিছুটা গরমের সময়, বসন্ত কাল।  
উচ্চ রক্তচাপ সহজে বুঝতে পারা যায়  যখন সবসময় রক্ত চাপ ১৪০/ ৯০ মিলি মিটার মার্কারি উপর থাকে। জীবন যাত্রার কিছু  পরিবর্তন  ও ওষুধ সেবন  রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হয়। 

 

 উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রোজা পালন করার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। 
 

১. রোজা পালনের ফলে শরীরে ক্যাটেকোলামাইন কম নিঃসরন হয়, ফলে রক্ত চাপ কম থাকে।  রোজা ওজন কমায়।  গরমের কারনে পানি শূন্যতা হয় ফলে  রক্ত চাপ কম থাকে।  ধূমপান না করা ও মানষিক দিক দিয়ে ভালো থাকা উচ্চ রক্তচাপ কম থাকার জন্য সহায়ক। এসময়  ঔষধের কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। ঔষধের মাত্রা কমাতে  হতে পারে ।
 

২. ডাইউরেটিক জাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বাদ দিতে পারলে ভালো  হবে। পরিবর্তে অন্য ঔষধ খেতে পারলে ভালো।  আর বাদ দিতে না পারলে ডোজ কমাতে হবে।  ডাইউরেটিক  জাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ইফতারের পরে খাওয়া ভালো। 
 

৩. বাসায় রক্ত চাপ মাপার মেশিনে থাকতে হবে।  মাঝে মাঝে মাপতে হবে।  রোজা পালন করার সময় বেশি কমে যাচ্ছে কি না দেখতে হবে । প্রয়োজনে ওষুধের মাত্রা কমাতে হবে। 
 

৪. যারা এআরবি বা এসিই ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ সেবন করেন তাদের উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা কম হয়,  মৃত্যু ঝুঁকিও কম থাকে । এ ধরনের ওষুধ ইফতারের পরে  খাওয়া যায় যার ফলে ডিজি ফিলিং বা মাথা ঘুরানো ভাব কম হয়। 
 

৫. ভালো হয় রমজানের রোজা থাকার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। 
 

৬. দৈনিক একবার লং এ্যকটিং বা দীর্ঘ সময় কার্যকর ওষুধ সেবন করা উচিত। 
 

৭. কম লবন ও কম চর্বি যুক্ত খাবার খেতে হবে। দৈনিক  ৫ গ্রামের কম লবন খাওয়া যায়। এক চামচ লবনে ৬ গ্রাম লবন থাকে।  খাবারে ভাত,  ফল, সবজি,  কম চর্বি যুক্ত ডেইরি প্রোডাক্ট, দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস থাকতে পারে।
 

৮. নিয়মিত ব্যয়াম করা উচ্চ রক্তচাপের রুগীদের জন্য প্রয়োজন ।  রমজান মাসে ব্যয়াম করতে হবে সন্ধ্যা রাতে খাবারের পর অথবা  সেহেরির পূর্বে। তবে তারাবির নামাজ ও পাঁচ বেলা নামাজ শরীরের মুভমেন্ট ব্যয়ামের পরিপূরক। 
 

৯. রোজা ধূমপান,  মধ্যপান ও অস্থিরতা থেকে দুরে রাখতে সহায়ক।  মানষিক সুস্থতা প্রদানে সহায়ক।  যার ফলে রোজা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। 
 

১০. উচ্চ রক্তচাপকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়।  উচ্চ রক্তচাপ  হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোক করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে ।  যাদের   উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নাই বা চিকিৎসা নিচ্ছেন না তাদের আবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত । 
 

১১. শরীরে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা বা শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যাকে আমরা ইমিউনিটি বলে খাকি,  তা বাড়াতে হবে। সুষম, পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেখানে থাকবে ভিটামিন সি,ভিটামিন ডি, জিঙ্ক ও  আমিষ জাতীয় খাবার। সবুজ ও রঙ্গিন শাক -সবজি- ফল । লেবু,  আনারস, তরমুজ, আাম,কলা ও কমলা খাওয়া যায়।  দৈনিক ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি খেতে হবে।  চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে ।  আমিষ জাতীয় খাবারের জন্য পরিমিত পরিমাণে মাছ,মাংস,ডিম,  দুধ  ও ডাল খাওয়া যায়।  হালকা ব্যায়াম করা যায়। পরিমিত ঘুম লাগবে। চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। ধুমপান খেকে বিরত থাকতে হবে। সকালে সূর্যের আলোতে থাকতে হবে, যাহা ভিটামিন ডি তৈরিতে প্রয়োজন। 
 

১২. ওজন কমিয়ে রখতে হবে। রমজানে অতি ভোজন পরিহার করতে হবে। ওজন বাড়লে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
আল্লাহ সকলকে সুস্থ রাখুন ও  ভালো রাখুন। রমাজানুল মোবারক। 
 

লিখেছেনঃ 

 

ডা. মো. শফিকুর রহমান পাটওয়ারী 
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (কার্ডিওলজি), এফএসিসি (আমেরিকা ), এফইএসসি (ইউরোপ), এফএসসিএআই(আমেরিকা), এফএপিএসআইসি (সিঙ্গাপুর) 
ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ 
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ 
সহযোগী অধ্যাপক কার্ডিওলজি

আরও পড়ুন