Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


বিভিন্ন রোগের বিপদ চিহ্ন

Main Image

হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড (ইনসেটে লেখক)


বেশিরভাগ রোগী মারা যায় শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়ার কারণে। বিপদ চিহ্ন না জানাতে, বাসায় থেকে রোগী খারাপ করে ফেলে।

প্রশ্রাব দেখে বুঝে নিনঃ

খুব ভালো করে প্রশ্রাবের দিকে খেয়াল করবেন। কয়বার প্রশ্রাব করছে, কতটুকু প্রশ্রাব হচ্ছে প্রতিবার। যদি প্রশ্রাব কমে যায়, অল্প প্রশ্রাব হয়, হসপিটালে সোজা ভর্তি হয়ে যাবেন। 

রোগীর কি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? পেট ফুলে যাচ্ছে? হঠাৎ করে গা ঝাঁকুনি দিয়ে খিচুনি হচ্ছে? দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যান। 

আঙুলের নখ চেপে পরীক্ষাঃ

হাতের আঙুলের নখে জোরে চাপ দিয়ে ধরুন কিছুক্ষণ, নখ সাদা হয়ে গেলে এবার ছাড়ুন, এবার ভালোভাবে খেয়াল করুন নখের রঙ ফিরে আসতে কত সময় লাগছে, যদি বেশি সময় লাগে, বেশি বলতে কত? ২ সেকেন্ডের বেশি লাগলে আপনার রোগী শকে আছে। এটাকে বলে ক্যাপিলারি রিফিল টাইম।

ব্লাড প্রেশার মেশিন  দিয়ে পরীক্ষাঃ

ব্লাড প্রেশার মেশিন নিন, এবার হাতের কব্জি মাঝে রেখে যেভাবে ব্লাড প্রেশার মাপবেন সেভাবে বাতাস দিয়ে টাইট করুন, টাইট অবস্থায় ৪-৫ মিনিট দিয়ে রাখুন, এবার বাতাস ছাড়ুন এবং খেয়াল করুন বাহুতে লাল লাল কতগুলো দাগ পড়েছে ছোট ছোট, ছোট্ট একটা বক্স কল্পনা করে যদি মনে হয় অনেক বেশি লাল লাল স্পট, দ্রুত হসপিটাল চলে যান। এটাকে বলে টর্নিকেট টেস্ট। সব রিপোর্ট নর্মাল আসলেও যদি আপনার টর্নিকেট টেস্ট পজিটিভ আসে, নিশ্চিত থাকুন আপনার ডেঙ্গু। এটা একদম প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন করবেন। 

বমি ও পাতলা পায়খানাঃ

দিনে ৩ বারের বেশি বমি করলে, ৩ বারের বেশি পাতলা পায়খানা হলে- সোজা হসপিটালে চলে যাবেন। এক মুহূর্ত দেরি করা যাবে না। 

বাসায় প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়াবেন। ২-৩লিটার, ডাবের পানি, আধা লিটার পানিতে গোলানো স্যালাইনের পানি, স্যুপ, শরবত (লবন ও চিনি) দেয়া খাওয়াবেন। যতক্ষণ মুখে খেতে পারবে খাওয়াবেন। যখন আর পারবেনা, বমি হবে অনেক, পাতলা পায়খানা, হসপিটাল নিয়ে যাবেন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকবেন।

ডায়বেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, SLE প্যাশেন্ট হলে প্রথম দিনেই হসপিটালে ভর্তি করে দিবেন। আপনার বাড়ির কাছের হসপিটালে আগে যাবেন।

সব সরকারি হসপিটালের ম্যানেজমেন্ট ভালো, বারান্দায় শুয়ে থাকলেও। কারণ সরকারি হসপিটাল এবং মেডিকেল কলেজ গুলোতে ন্যাশনাল গাউড লাইন মেনে চিকিৎসা দেয়া হয়। বাসায় পালস অক্সিমিটার থাকলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন চেক করবেন। 

কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে হার্ট ইনভলভ হয়ে যাবে, দেরি করলে অর্গান ফেইলিউর হয়ে যায়। ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস কিংবা একিউট কিডনি ইঞ্জুরির রোগীর জন্য আইসিউ লাগবেই। এসব রোগী বাইরে ম্যানেজ করা যায় না। রোগী খারাপ দেখলে সকল প্রস্তুতি রাখুন। যে কোন ইসিজি চেঞ্জেস, বিশেষ করে ট্যাকিকার্ডিয়া, শ্বাস দ্রুত হওয়া মানে ট্যাকিপেনিয়া বিপদ চিহ্ন। খারাপ হওয়ার আশংকা বেশি। কারো কারো ক্ষেত্রে প্লুরাল ইফিউশন অর্থাৎ লাংসে পানি চলে আসতে পারে।

মনে রাখবেন, প্রতিদিন সিবিসি টেস্ট, ডাক্তারের পরামর্শ, হসপিটাল এডমিশনের প্রস্তুতি, প্রচুর তরল খাওয়ানো, ব্লাড প্রেশার মাপা, বিপদ চিহ্ন খেয়াল করা, দেরি না করে হসপিটাল নেয়া, জ্বর কমে গেলে আরও সতর্ক হওয়া, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়ানো। 

* ডেঙ্গু এখন আর শুধু ঢাকাতে সীমাবদ্ধ না, সারা বাংলাদেশে ছড়িয়েছে।

* দিনে রাতে যে কোন সময় ডেঙ্গু মশা কামড়ায়।

* পরিষ্কার নোংরা সব পানিতেই ডেঙ্গু হচ্ছে। 

* Dengue NS1 test জ্বর শুরু হওয়ার ৩দিন পর করলে লাভ নেই। সেক্ষেত্রে CBC, SGOT, Dengue Antibody (IgG+IgM) করতে হবে। 

* যারা রক্ত তরল করার মেডিসিন খান, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটি বন্ধ রাখবেন কিংবা খাবেন। কোন অবস্থাতেই নিজে নিজে বন্ধ বা খাওয়া যাবে না। 

সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সুরক্ষা চাইবেন। চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। সতর্ক থাকুন। 

 

লেখক:

ডা. নাহিদ হাসান
মেডিসিন, বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল 
কনসালটেন্ট, হাই কেয়ার জেনারেল হসপিটাল। 

তথ্যসূত্র:
Dengue National Guideline
CDC

আরও পড়ুন