Advertisement
Doctor TV

রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫


তুরস্কে টানা সেবা দেওয়া চিকিৎসকের মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা

Main Image

মাসরি যখন অন্যের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত, তখন তিনি জানতেন না নিজের পরিবারের লোকেরা কেমন আছে


তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে সময় যত গড়াচ্ছে, নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। হাজার হাজার মানুষ ভবনের নিচে আটকা। হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড়। যাদেরকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে আছে শিশুরাও।

টানা চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলা অনেক চিকিৎসক বলছেন, তারা প্রায়ই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। ছোট ছোট নিষ্পাপ এসব শিশু, যাদের অনেকেই আপনজনদের হারিয়েছে, ফিরে এসেছে মৃত্যুর খুব কাছ থেকে, তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনটাকে স্থির রাখতে পারছেন না।

এমনই এক চিকিৎসক আহমেদ আল-মাসরি। ভূমিকম্পের পর সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমের শহর আফরিনের একটি হাসপাতাল টানা ৩০ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। মর্মস্পর্শী সেই অভিজ্ঞতার কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন মাসরি।

আল-মাসরি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তার হওয়াটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার। ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে উদ্ধার করা সাত বছর বয়সী এক শিশুকে আমার কাছে আনা হয়। কেন জানি না, তার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ছেলেটি যেভাবে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল, আমার মনে হয়েছিল যেন সে আমাদের বিশ্বাস করে, সে জানে যে সে এখন নিরাপদে আছে। আমার কান্না আসছিল।

তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পরপরই হাসপাতালে দুই শতাধিক রোগীকে আনা হয়। উদ্ধারকারীরা ১৮ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসলে পরীক্ষা করে দেখি সে ভালো আছেন। হঠাৎ দেখলাম, তার বাবা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেছেন। বাবা ও শিশুটি ছাড়া তাদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই। পরিবারের বাকি সদস্যদের মরদেহ করিডোরে রেখে ছেলের কাছে ছুটে এসেছেন বাবা।

মাসরি যখন অন্যের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন, তখন তিনি জানতেন না তার নিজের পরিবারের লোকেরা কেমন আছে? তার বাবা-মা ও ভাই-বোনরা হাসপাতাল থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে থাকেন। তবে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা সীমান্তের ওপারে দক্ষিণ তুর্কি শহর গাজিয়ানটেপে বাস করেন, যা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি।

মাসরি বলেন, এই ধরনের সংকটের সময় সবচেয়ে খারাপ অনুভূতি হলো, আপনার পরিবার ও প্রিয়জন ঠিক আছে কিনা তা না জানা। দীর্ঘ সময় পর তার ভাই হাসপাতালে এসে জানান, পরিবারের সবাই নিরাপদে আছে। এরপর তিনি হাসপাতালে কিছুটা বিশ্রাম নেন।

মাসরি জানান, পরের দিন সাত বছর বয়সী সেই শিশু মোহাম্মতকে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন সে তাকে চিনতে পেরেছে কিনা। উত্তরে শিশুটি বলেছিল, হ্যাঁ, আপনিই সেই ডাক্তার যিনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৮৩তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তুরস্কে ১২ হাজার ৩৯১ ও সিরিয়ায় ২ হাজার ৯৯২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন