Advertisement
Doctor TV

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


শিশুর দাঁতের যত্ন গর্ভ থেকেই শুরু হয়

Main Image

গর্ভবতী পুষ্টিকর খাবার না খেলে দেখা যাবে তালুকাটা বা ঠোঁট কাটা, দন্ত ক্ষয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রোগ নিয়ে শিশুর জন্ম হচ্ছে


কম-বেশি সব মা-বাবাই সন্তানের দাঁতের যত্ন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। দাঁত উঠলে কীভাবে কি করবেন, তা নিয়ে বেশি ভাবেন। অথচ একটি শিশু গর্ভে থাকাকালীনই তার দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত।

এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, গর্ভকালীন কীভাবে একটি শিশুর দাঁতের যত্ন নেব? কারণ গর্ভকালীন শিশুর শারীরিক গঠনের পাশাপাশি দাঁতের গঠনও শুরু হয়।

গর্ভকালীন দাঁতের যত্ন
গর্ভবতী পুষ্টিকর খাবার না খেলে পরবর্তীতে দেখা যাবে তালুকাটা বা ঠোঁট কাটা, দন্ত ক্ষয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব রোগ নিয়ে শিশুর জন্ম হচ্ছে। এজন্য অবশ্যই গর্ভবতীর সব ধরনের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

শিশুর প্রথম ৬ মাসে দাঁতের যত্ন
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মা-বাবা ভাবেন তার মুখে তো দাঁতই নেই, পরিচর্যার কি প্রয়োজন? এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ শিশু প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ পানের ফলে মুখে একটি আবরণ তৈরি হয়। এটি পরিষ্কার না করলে শিশু ক্ষুধামন্দায় ভুগবে। ঠিকঠাক না খেলে সঠিক বৃদ্ধি হবে না, অসুস্থ হয়ে পড়বে।

এজন্য পরিষ্কার পাতলা কাপড় আঙুলের মাঝে পেচিয়ে নিয়মিত শিশুর মুখগহ্বর পরিষ্কার করে দিতে হবে। বিভিন্ন দোকানে ফিঙ্গারটিথ ব্রাশ পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়েও মুখগহ্বর পরিষ্কার করা যেতে পারে। আবরণ না থাকলে শিশু খাবারের ভালো স্বাদ পাবে, স্বাস্থ্যহানি ঘটবে না।

শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন
ছয় মাস বয়সে শিশুদের দাঁত ওঠা শুরু করে। এ সময় তার প্রতি খুবই যত্নশীল হতে হবে। প্রথম যখন সে থু থু ফেলতে পারবে, তখন পেস্ট ব্যবহারের অভ্যাস করাতে হবে। বয়স এক বছরের মতো হলে শস্যদানার পরিমাণ পেস্ট দিতে হবে। বয়স ২-৩ বছর হলে মটরদানার সমান টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করাতে হবে। বয়স তিন বছরের বেশি হলে আমরা বড়রা যে পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করি, তাকেও তা দিতে হবে।

স্থায়ী দাঁত এলে করণীয়
ছয় বছর বয়সের পর শিশুর দাঁত পড়া শুরু হয় এবং স্থায়ী দাঁত আসে। এ সময় খুবই মনোযোগী হতে হবে। অনেক মা-বাবাই শিশুর স্থায়ী দাঁত চলে এসেছে, তা বুঝতে পারেন না। এজন্য এগুলোর সাথে ক্ষণস্থায়ী দাঁতও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। তারা ভাবেন, ক্ষণস্থায়ী বা দুধ দাঁত তো পড়েই যাবে, যত্ন নিয়ে কী লাভ? এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

দুধ দাঁতের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। অকাল বয়সে দুধ দাঁত পড়ে গেলে ওই জায়গা ফাঁকা থাকে। তখন পেছনে দাঁত হেলে পড়বে এবং দাঁত আঁকাবাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শিশু কোনো কিছু চিবিয়ে খেতে পারবে না। এতে সে পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।

দুধ দাঁতে মা-বাবা মনোযোগ না দেওয়ায় স্থায়ী দাঁতেও তার প্রভাব পড়ে। স্থায়ী দাঁতগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া শুরু করে। ঠিকমতো ব্রাশ না করলে স্থায়ী দাঁতে ক্ষয়রোগ হয় এবং একটি পর্যায়ে ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

বড়দের ক্ষেত্রে যেমন আমরা রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করি, শিশুদের জন্য আপেক্সিফিকেশন বা পালপোটমি, পালপেকটমি চিকিৎসা দেওয়া হয়। এগুলো ভয়াবহ ধরনের চিকিৎসা, আমাদের শিশুরা সহ্য করতে পারে না। এজন্য ছোটবেলা থেকেই শিশুদের সকালে নাস্তার পরে এবং রাতে খাবার খাওয়ার পরে দুইবেলা ব্রাশ করানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে কুলি করে এসে নাস্তা করবে।

কাজটি মা-বাবা নিজেরা করে সন্তানকেও উৎসাহী করাবেন। অবশ্যই বকাঝকা দিয়ে দাঁত ব্রাশের অভ্যাস করাতে যাবেন না। এতে হিতে-বিপরীত হতে পারে। সারা জীবনের জন্য চিকিৎসকের প্রতি তার মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হবে।

দাঁতের যেকোনো সমস্যার জন্য বিএমডিসির নিবন্ধিত ডেন্টাল সার্জনের কাছে যেতে হবে। হাঁতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন না। হয়তো কম খরচ ভেবে আপনি তাদের চিকিৎসা নিবেন, পরবর্তীতে কিন্তু বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।

আরও পড়ুন