Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


যেভাবে হাড়ক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন নারীরা

Main Image

একটা সময় হাড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হয়ে যাবে। খুব সহজে ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।


হাড়ক্ষয় রোগ অনেকের হয়। আমাদের হাড় তৈরি হওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত তা পরিমাণ মতো তৈরি ও ক্ষয় হয়। বয়সের একসময় দেখা যায় ক্ষয় বেশি হয়। ৩৫ বছর পর থেকে আস্তে আস্তে ক্ষয় বেশি হয়। ওভারি থেকে হরমোন প্রোডাকশন যখন কমেছে, তখনই আমাদের মেনোপজের সময় শুরু হয়।

এছাড়াও আরও কিছু কারণ রয়েছে। হাড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোন। একটা সময় হাড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হয়ে যাবে। খুব সহজে ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। শুরুতেই চেহারটা ভেঙে যাবে। অনেকের কোমরে ব্যথা হতে পারে। মেরুদণ্ডে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কোমর থেকে ব্যথা নিচের দিকে নেমে আসে। এমন অনেকেই বলেন, হাঁটুতে ব্যথা। বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেন না। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না।

অনেকের হাঁটুতে ব্যথা বেশি হয়। খুব সামান্য আঘাতে ভেঙে যেতে পারে হাড়। কোনো প্রকার কিছু ছাড়াই হাড় ভেঙে গিয়ে পড়েও যান অনেকে। কোনো প্রকার আঘাত ছাড়াই, যদিও তা হয় বয়সের শেষের দিকে।

এক্ষেত্রে আমরা যদি সতর্ক হই, প্রথমে আমাদের ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম। আমার খাওয়া অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারি। আরেকটি হলো আমরা যদি শরীরের মাসলগুলোকে শক্তিশালী করি, সেক্ষেত্রে সাপোর্ট পাবো।

নিয়মিত ব্যায়াম করবো। তবে ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করতে পারি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন। নিয়মিত ব্যায়াম তো করবোই, পাশাপাশি আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।

ওজন কমানোর জন্য আমরা ব্যায়াম করতে বলি। তা কিন্তু আপনাকে হাঁটা দিয়ে শুরু করতে হবে। শুরুতেই যদি আপনি কঠিন ব্যায়াম করতে শুরু করেন, কষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ ওজন কমানোর ব্যায়াম একটু দেরিতে শুরু করবেন। তবে লিফ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে পারেন।

হাড়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ভালো রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাবো। ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারি। ডিম খেতে পারি। মাছ-মাংসে ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রচুর। ছোট মাছ কাঁটাসহ খেতে পারি। নাট বা বাদাম ক্যালসিয়ামের অভাবটা অনেক ক্ষেত্রে পূরণ করে।

অনেকেই একটা বয়য়ের পরে দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেতে পারেন না। সে সকল মানুষের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেওয়া লাগতে পারে। এছাড়াও খাবারের মধ্যে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন ‘ডি’ সবচেয়ে বেশি পাই আমরা সূর্য থেকে। বাইরের রোদ থেকে। বিশেষ করে সকাল ১১টার দিকে যে রোদ থাকে। আমাদের বারান্দায় যেতে হবে এবং হাতে-পায়ে যেখানে সুযোগ আছে রোদ লাগাতে হবে। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা থেকে ১৫ মিনিট থাকা যেতে পারে।

এছাড়াও খাবারগুলো ক্যালসিয়াম রিচ কি না খেয়াল রাখতে হবে। ভিটামিন ‘ডি’ শরীরে ক্যালসিয়ামটা শোষণ করে। এক্ষেত্রে আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম থাকলেও ভিটামিন ‘ডি’ না থাকলে কাজ করবে না।

ভিটামিন ‘এ’, ‘ই’, ‘বি’ এবং ‘সি’ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। আর এগুলোর ঘাটতি যদি মেটাতে চাই, তাহলে আমাদের সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। সবুজ ছাড়াও অরেঞ্জ কালারের যে সবজিগুলো রয়েছে এগুলো খেতে হবে। মাছ-মাংস, প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। আর এটাই সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে।

যে সকল বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে; যেমন- জাঙ্কফুড খাবার ছাড়তে হবে। বিশেষ করে যে নারীরা সিগারেট খান, তা পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। অ্যালকোহল জাতীয় বিষয়াদি ছেড়ে দিতে হবে। সফট ড্রিংকস ছেড়ে দিতে হবে।

ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো রোগব্যাধি থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোলেস্টেরলের পরিমাণটা রক্তে ঠিকমতো থাকে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।

কখনো কখনো যদি মনে হয়, কোমর থেকে ব্যথা নেমে যাচ্ছে বা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়, তাদেরকে চিকিৎসকের কাছে যেতে বলবো। চিকিৎসক তাদের সেক্ষেত্রে এক্স-রে, এমআরআইসহ বিভিন্ন ডায়াগনসিস করাতে বলতে পারেন। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

যদি দেখেন লাইফ স্টাইল পরিবর্তন ও খাবার-দাবারে পরিবর্তন করার পরেও উপসর্গগুলো যাচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। একটা বিষয় কিন্তু বলে রাখি- মেয়েদের ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া যাবে না। কারণ, এতে অনেক রকম ক্ষতি হয়। আবার হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির প্রয়োজনও নেই।

আরও পড়ুন