Advertisement
Doctor TV

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র কেমন হওয়া উচিত

Main Image

অনেক নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের সাথে ব্যবহারটা মানবিক হয় না


মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে জানতে হবে মাদকাসক্তি কী? নেশায় জড়িয়ে পড়া বা মাদকাসক্তি একটি ব্যাধি। সাধারণত চিকিৎসাবিদ্যায় মাদকাসক্তিকে বলা হয়, ক্রনিক রিলাক্সিং ব্রেইন ডিজিজ বা বারবার হতে পারে এমন স্নায়ুবিক রোগ।

মাদকাসক্তি প্রতিরোধে সবার আগে মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধ করতে হবে। এরপর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। শিশুর প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য। তবে কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তখন চিকিৎসকের ভূমিকা সামনে আসবে।

মাদকাসক্ত একটি রোগ। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে রোগী হিসেবে দেখতে হবে, তাকে দোষারোপ করা যাবে না। মাদকমুক্ত রাখতে অনেকে সন্তানকে বিদেশ পাঠিয়ে দেন ও অল্পবয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। এসব খুব ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত, কখনো এগুলো করতে যাবেন না। কারও মধ্যে মাদকাসক্তির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সাইক্রিয়াটিস্টের শরণাপণ্ন হতে হবে এবং তার কাছে লক্ষণগুলো গোপন করবেন না। সঠিক তথ্য না দিলে আমাদের চিকিৎসা করতে অনেক সমস্যা হবে।

মনে রাখবেন মাদকাসক্তি একটি রোগ এবং এর বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। মাদকাসক্ত ছেলে বা মেয়েকে সঠিক চিকিৎসা দিলে অবশ্যই তিনি এ রোগটি থেকে মুক্তি পাবেন। মাদকাসক্তের চিকিৎসা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি বা গুজব আছে, সেসবে কান দিবেন না। এখন সরকারিভাবেও অনেক হাসপাতালে মাদকাসক্তের চিকিৎসা হয়। জাতীয় মাদকাসক্তি নিরাময় ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আর্মড ফোর্স মেডিকেল, সিএমএইচে চিকিৎসা ছাড়াও সব সরকারি হাসপাতালে মনোরোগ চিকিৎসক আছেন।

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি নিরাময় বা চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। কারণ চিকিৎসার ধাপগুলো শেষ করতে বেশ সময় লাগে। এজন্য আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে, নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সত্যি বলতে, আমাদের নিরাময় কেন্দ্রগুলোর চিত্র খুবই হতাশাজনক। এখন প্রতিটা পাড়ামহল্লায় একটি করে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে, অনেকে আবার রিহ্যাব সেন্টার বলে দাবি করেন। আদর্শ নিরাময় কেন্দ্র তো দূরের কথা, একটি চলনসই নিরাময় কেন্দ্র খুলতে গেলেও যা লাগে তা অধিকাংশ নিরাময় কেন্দ্রে নেই। কারণ, এখানে টিমওয়ার্ক সবচেয়ে বেশি জরুরি।

মাদকাসক্তি চিকিৎসা বা নিরাময় কেন্দ্রে সাইক্রিয়াটিস্ট থাকবে, সাইকোলজিস্ট থাকবে, কাউন্সিলর থাকবে, ফিজিওথেরাপিস্ট থাকবে, এমনকি ওয়ার্ড বয়, নার্স, আয়া, ক্লিনার যারা থাকবে, তাদের প্রত্যেককেই বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হয়। হয়। একজন মাদকাসক্তের সাথে তাদের ব্যবহার কেমন হবে সেটা তাদের জানা থাকা প্রয়োজন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদকাসক্তকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের সাথে ব্যবহারটা মানবিক হয় না। এখানে অবশ্যই একটা গোজামিল দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, নিরাময় কেন্দ্র তৈরির ক্ষেত্রে আদর্শ না হোক অন্তত সায়েন্টিফিক বা বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা দেয়ার সুব্যবস্থা রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল থাকতে হবে, অবকাঠামোগত যেসব সুবিধা প্রয়োজন সেসবের ব্যবস্থা করতে হবে, রোগীর বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, রোগীর জন্যে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, নিয়মিত ফলোআপে রাখতে হবে।

সরকারি থেকে শুরু করে কমিউনিটি, সামাজিক, পারিবারিক প্রতিটি পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা দূর করা না গেলে সমাজ থেকে মাদকাসক্তি চিরতরে নির্মূল করা কখনো সম্ভব হবে না। মাদকাসক্তির চিকিৎসার যে চারটি ধাপ আছে তার প্রথম ধাপই হচ্ছে মোটিভেশন। মাদকাসক্ত ছেলে মেয়েকে আর যখন ঘরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তাকে হাসপাতাল বা নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তির ক্ষেত্রে তাকে মোটিভেশন দিতে হবে। তারপর কোনো সাইক্রিয়াটিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে তাকে মোটিভেশনের জন্যে পাঠাতে হবে। সবশেষে নিরাময় কেন্দ্র অর্থাৎ কোনো অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের টিমের কাছে তাকে সোপর্দ করতে হবে।

এরপরের ধাপ হচ্ছে ডিটক্সিকেশন অর্থাৎ তার শরীরে যে বিষাক্ত পদার্থগুলো আছে, সেগুলো বের করা। এজন্যে তাকে প্রয়োজনীয় মেডিকেশন, ওষুধপত্র, থেরাপি দিতে হবে এবং সার্বক্ষণিক অবজারভেশনে রাখতে হবে। এ সময় তার মধ্যে প্রত্যাহারজনিত কিছু উপসর্গ দেখা দিবে। কেউ হিরোইন খেলে তাহলে তার প্রত্যাহারজনিত উপসর্গ অনেক মারাত্মক হয়। তার ডায়রিয়া হয়, বমি হয়, নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এ পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা করা না হলে রোগী শকে চলে যেতে পারে, এমনকি মারাও যেতে পারে।

শুধুমাত্র চারটি ধাপে চিকিৎসা করলেই হবে না। এসব কেন্দ্রে একটি জেলা হাসপাতালের মতো সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। প্রয়োজনে যেন আমরা রোগীকে অক্সিজেন দিতে পারি, স্যালাইন দিতে পারি এবং অন্যান্য লাইফ সেভিং সার্ভিসগুলো যেন রোগীকে দিতে পারি সে ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন