বিশ্বজুড়ে লিউকেমিয়ায় বছরে ৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক
2022-09-04 15:59:59
বিশ্বজুড়ে লিউকেমিয়ায় বছরে ৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু

বিশ্ব লিউকেমিয়া দিবস উপলক্ষে বিএসএমএমইউয়ে আয়োজিত সেমিনার

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখের বেশি মানুষ লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ৪ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিশ্ব লিউকেমিয়া দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগ আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সেমিনারে বলা হয়, গ্লোবোক্যান ২০২০ এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে নতুন করে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ এবং লিউকেমিয়ায় ৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে এক বছরে নতুন প্রায় ৩ হাজার মানুষের লিউকেমিয়া শনাক্ত হয় এবং ২ হাজারের বেশি মানুষের লিউকেমিয়ায় মৃত্যু হয়। লিউকেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা মূলত রক্ত স্বল্পতা, দুর্বলতা, রক্তপাত, জ্বর এসব উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন।

সেমিনারে আরও বলা হয়, লিউকেমিয়ার ধরণ অনুসারে চিকিৎসায় ভিন্ন হয়ে থাকে। লিউকেমিয়া একিউট ও ক্রনিক এই দুই ধরণের হয়ে থাকে এবং ধরণ ভেদে চিকিৎসায় ভিন্নতা হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের পরে রোগের ঝুঁকির পর্যায় বিবেচনা করে রোগের চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়। সিবিসি, পিবিএফ ফ্লো সাইটোমেটি, বোন ম্যারো পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং সাইটোজেনেটিক ও মলিকুলার পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর ঝুঁকির স্তর সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়। মুখে খাবার ঔষধ, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা হয়। রোগ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঔষধের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনে ঔষধের ডোজ পরিবর্তন করা হতে পারে। ক্রনিক লিউকেমিয়া মিত্র চিকিৎসায় সিএলএল ও সিএমএল চিকিৎসায় টার্গেটেড থেরাপি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এসব ঔষধের অধিকাংশই এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। রোগ বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে হেমাটোপয়েটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সম্ভব। উচ্চ ঝুঁকির একিউট লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় হেমাটোপয়েটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ লিউকেমিয়া রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি আরও বলেন, লিউকেমিয়া সকল রোগী যাতে সহজে জরুরী চিকিৎসাসেবা ,প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং চিকিৎসার অন্যান্য উপকরণ সুলভে পেতে পারেন এবং রোগ নির্ণয়ের ও ঝুঁকি নির্ণয়ের সর্বাধুনিক ও প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সহজলভ্য এবং দেশে হেমাটোপরেটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্ভিস আরো বিস্তৃত করার বিষয়ে সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

লিউকেমিয়াসহ সকল ক্যান্সারের বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করার আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের রেসিডেন্ট ডা . শারমিন ইয়াসমিন ও ডা. মীম জারিন তাসনিম।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান। বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন মেডিসিন অনুষদের ডিন হেমাটোলজী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, হেমাটোলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস ও অধ্যাপক ডা. মোঃ রফিকুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হেমাটোলোজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে ও ডা. মারুফ রেজা কবির।


আরও দেখুন: