দ্রুত চিকিৎসা নিলে মেনিনজাইটিসে মৃত্যু কমে

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
2021-07-31 17:13:40
দ্রুত চিকিৎসা নিলে মেনিনজাইটিসে মৃত্যু কমে

শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে

গুরুতর সংক্রামক রোগ মেনিনজাইটিস শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় মৃত্যুহার কমিয়ে আনা যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনো বয়সের মানুষের মেনিনজাইটিস হতে পারে। তবে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে রোগটি ছড়িয়ে থাকে বলে বেশি সাবধানতার পরামর্শ দেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজনীন আক্তার (রুবী) ডক্টর টিভিকে জানান, মেনিনজাইটিস দুরারোগ্য ব্যাধি। এটি মস্তিষ্ক ও কিডনির কার্যক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। রোগটি প্রতিরোধে ৯ মাস থেকে ৪৫ বছর বয়সী যেকোনো সুস্থ ব্যক্তিকে মেনিগোকক্কাল মেনিনজাইটিসের টিকা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ভেতর স্নায়ুরজ্জুর চারপাশ যে পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে, তার নাম মেনিনজিস। এর মূল কাজ মস্তিষ্ককে সব ধরনের আঘাত, সংক্রমণ ইত্যাদি থেকে নিরাপদ রাখা, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল এবং গ্লুকোজসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করা। এই পর্দায় জীবাণুর সংক্রমণ হলে তাকে মেনিনজাইটিস বলা হয়। সংক্রমণ পর্দায় হলেও তা আশপাশের মস্তিষ্ক কোষ কলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে চাপ বাড়ে এবং কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

মূলত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য অণুজীবের সংক্রমণে মেনিনজাইটিস হয়ে থাকে। বিশ্বে প্রতিবছর সোয়া কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। দারিদ্র্য, ঘনবসতি হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রোগটি বেশি দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক লক্ষণ থেকে মেনিনজাইটিস শনাক্ত করা কষ্টকর। সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। আর ২০ শতাংশ রোগী বেঁচে গেলেও বাকি জীবন নানা সমস্যা নিয়ে চলতে হয়। ৫ বছরের কম শিশু ও ১৫-১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই রোগটি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. খায়রুল ইসলাম ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘মেনিনজাইটিসের চিকিৎসা তাড়াতাড়ি শুরু করতে হয়। একটু দেরি করলে রোগীকে বাঁচানো যায় না। গ্রামে কারও জ্বর এলে তাকে লোকাল এন্টিভায়াটিক খাওয়ানো হয়। রোগী এলোমেলো আচরণ করে কিংবা কথাবার্তা উল্টাপাল্টা বলে, তখন ভুতে ধরেছে মনে তাবিজ-কবজের চিকিৎসা করে ওঝা। ততদিনে বেশি দেরি হয়ে যায়। অথচ এগুলোই মেনিনজাইটিসের লক্ষণ।’

রোগটির চিকিৎসা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটি জিনিস লাগে এ চিকিৎসায়। রোগীর ক্লাসিকাল সিমটম লাগবে। রোগীর ঘাড় শক্ত হওয়া লাগবে। আর সিএসএফ অর্থাৎ কোমর থেকে সুই দিয়ে রস পরীক্ষা করার পরে যে তথ্য পাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে।’


আরও দেখুন: