জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস আজ

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2024-11-02 11:37:00
জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস আজ

জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস

আজ ২ নভেম্বর, ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’। ১৯৯৫ সালে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ১৯৯৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ‘এসো প্রাণের ছোঁয়ায় গড়ি রক্তের বন্ধন/ চোখের জ্যোতি হয়ে উঠুক প্রাণের স্পন্দন’- এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এ বছর দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। 

 

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ১৪ জুন আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালিত হয়। অন্ধত্ব এবং চোখের বিকলতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার পালিত হয় বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। সাল গণনা করলে দেখা যায়, একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক দিবস হবার কারণে ৫ বছর আগে থেকে জাতীয়ভাবে মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর উদ্যোগে দেশে প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয় ১৯৭৭ সালের ২ নভেম্বর। উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে থাকলেও স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং মরণোত্তর চক্ষুদান বা কর্ণিয়া দানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

 

জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর নূরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম স্বেচ্ছা রক্তদাতা। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জুন রক্তদান করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর চাহিদা ১০ লাখ ব্যাগ রক্ত। এর বিপরীতে প্রতিবছর রক্ত পরিসঞ্চালন হয় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অধিকাংশের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন অন্যের রক্ত। অর্থাৎ আপনার আমার রক্তদানের ওপর নির্ভর করে তাদের বেঁচে থাকা। 

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনসংখ্যার হিসাবে রক্তদাতার হার মাত্র ০.৯৪ শতাংশ। কোনো অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ১ থেকে ৩ শতাংশ নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদান করলে নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যায়। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যে কোনো সুস্থ মানুষ, যাদের ওজন ৪৫ কেজির বেশি তারাই রক্ত দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অতিরিক্ত দেড় লিটার রক্ত থাকে। একশত বিশ দিন পর এই রক্তকণা ভেঙে যায়। অর্থাৎ এ রক্ত কোনো কাজে আসে না। তাই সুস্থ মানুষ নিয়মিত চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারে। রক্তদানের মাধ্যমে শরীরে এইডস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি ও সি-সহ সংক্রামক কোনো ঘাতক ব্যাধি রয়েছে কি না, তা বিনা খরচে জানা যায়।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মেডিসিন ক্লাব, বাঁধন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও দেশে সংগৃহীত রক্তের মাত্র ৩০-৩৫ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। উন্নত বিশ্বে প্রায় শতভাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয় স্বেচ্ছা রক্তদাতার কাছ থেকে। দেশের বিশাল জনসংখ্যার যদি ১.৫ ভাগ লোক নিয়মিত রক্তদান করে তাহলে রক্তের অভাবে একজন রোগীও মারা যাবে না। নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বছরে দুইবার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত রক্তদান উচ্চরক্তচাপ কমায়। শেষ কথা, রক্তদাতার জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো তার দানকৃত রক্তে গ্রহীতার জীবন বেঁচে যাওয়া।


আরও দেখুন: