আন্দোলনে আহতের উন্নত চিকিৎসায় যে পরামর্শ দিলেন যুক্তরাজ্যের সার্জনরা
রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সফররত যুক্তরাজ্যের সার্জনরা
বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাজ্যের সার্জনরা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের অধিকাংশের চিকিৎসা এ দেশেই সম্ভব। তবে গুরুতর ও জটিল সমস্যায় যাদের বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তি আনায় সহযোগিতা করতে চান তারা। এতে দেশের স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা আরও উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা তাদের। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা পরিদর্শন শেষে তারা এই পর্যবেক্ষণ দেন।
তারা জানান, গুরুতর ও জটিল কেসে যাদের বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে, প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তি দেশে এনে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এতে দেশের স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা আরও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
গত ২৭ অক্টোবর রোববার থেকে যুক্তরাজ্যের তিনজন শীর্ষস্থানীয় সার্জন প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ)-এর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। এর অংশ হিসেবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর পিএইচএ এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় ডিআইইপি ফ্ল্যাপ পুনর্গঠন (DIEP Flap Reconstruction) পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা স্তন ক্যান্সারের পর স্তন পুনর্গঠন এবং গুরুতর আঘাত বা জটিল অস্ত্রোপচারের পর ক্ষত ঢাকতে ব্যবহৃত হয়।
কর্মশালার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আওয়াল কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন। কর্মশালায় নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশি-ব্রিটিশ সার্জন ডা. মো. জাকের উল্লাহ, যিনি বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের (Barts Health NHS Trust) কনসালট্যান্ট জেনারেল ও অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জন এবং PHA’র ট্রাস্টি।
যুক্তরাজ্য থেকে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞ সার্জনরা ছিলেন ডা. ইয়িলডিরিম ওজদোগান এবং ডা. ফেথন কারাগিয়ানিস, যারা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকা দুই রোগীর ওপর সরাসরি অপারেশন করেন। এই লাইভ সার্জিক্যাল সেশন
বাংলাদেশি সার্জনদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করে, যা জটিল পুনর্গঠনমূলক সার্জারিতে তাদের দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করবে বলে আয়োজকরা জানান।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন সার্জনরা। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৭-৮ জন এবং বার্ন ইনস্টিটিউটে ৫-৬ জন রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যৎ চিকিৎসা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
ব্রিটিশ সার্জন ডা. ইয়িলডিরিম ওজদোগান বলেন, জটিল কেসের সমাধানে প্রয়োজনে পিএইচএ একসঙ্গে কাজ করবে এবং দেশের বাইরে থেকে মাল্টি-স্টেজ প্রযুক্তি এনে উন্নত সেবা ও চিকিৎসা শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব।
পিএইচএ ট্রাস্টি ও বাংলাদেশি-ব্রিটিশ ডা. মো. জাকের উল্লাহ বলেন, সব রোগীকে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন নেই, কারণ আমাদের চিকিৎসকরা বৈশ্বিক গাইডলাইন ও প্রটোকল অনুসরণ করেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। যদি বিশ্বমানের চিকিৎসা দেশেই নিশ্চিত করা যায়, তবে সেটা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর মানুষের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন এবং প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ আহত হন। আহতদের অনেকের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, যাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এই কর্মশালার মাধ্যমে সেই চিকিৎসা বিশেষত উন্নত প্লাস্টিক সার্জারি দেশেই প্রদানের সক্ষমতা তৈরিতে বিশেষ অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর, অধ্যাপক ফিরোজ কাদের, অধ্যাপক এম এ মাজিদ, অধ্যাপক শাফকাত হুসেন খন্দকার, ডা. ফোয়ারা তাসমিম এবং ডা. মারুফুল ইসলামসহ শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা দ্বিতীয় দিনের কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করে, যা দেশের শল্যচিকিৎসা খাতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।