সীসা দূষণের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2024-10-25 22:29:00
সীসা দূষণের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন

শুক্রবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালি ও মানববন্ধনে বিশেষজ্ঞ বক্তারা

সীসা দূষণের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ কারণে সীসা দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ ও তা বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বক্তারা। 

 

শুক্রবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালি ও মানববন্ধনে বিশেষজ্ঞ বক্তারা এ কথা বলেন। ইউনিসেফের সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে ইয়ুথনেট গ্লোবাল ও পিওর আর্থ বাংলাদেশ। প্রতিপাদ্য ছিল “সীসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি-বলে।”   
 

আয়োজিত এই র‌্যালিটি তেজগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়। অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেন “সীসা দূষণ প্রতিরোধে, আমরা আছি একসাথে।” এসময় সীসা দূষণ প্রতিরোধে সরকারের কাছে পাঁচটি প্রধান দাবি জানান বক্তারা।

 

র‌্যালির আয়োজকরা জানান, সীসা দূষণ বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, যা বিশেষত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এক গবেষণা অনুসারে, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু সীসার উচ্চমাত্রায় ভুগছে, যা তাদের মানসিক বিকাশে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।

 

আইসিডিডিআর, বি-এর গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার প্রায় ৮০ শতাংশ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সীসার উপস্থিতি রয়েছে, যা তাদের স্নায়ুবিক ও শারীরিক উন্নয়নে স্থায়ী ক্ষতি করে। 
রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর মো. মুসা বাকের বলেন, “পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সিসার প্রভাব স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সীসা দূষণের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও, সীসা দূষণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রতিবছর প্রায় ২৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।

 

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ঢাকা ইউনিটের সদস্য সুজানা জহির রাফা বলেন, “গর্ভবতী নারীদের জন্য সীসা দূষণ মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় ও শিশুর বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে।”

 

পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “তরুণরাই আগামী দিনের স্থপতি। তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই ভবিষ্যতে সীসামুক্ত একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।”

ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, “আমরা শিশুদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছি। সীসা দূষণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।”  তিনি বলেন, সীসামুক্ত পণ্য তৈরির জন্য বিশেষ করে শিশুদের খেলনা, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র, এবং দেয়াল রঙের মান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, নিরাপদ উপায়ে সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও অবৈধ রিসাইক্লিং কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।

সীসা কারখানা বন্ধে সরকারের তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি সীসা দূষিত অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করে পরিষ্কারের জন্য কার্যকর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার দাবি করেন এবং জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন ।


আরও দেখুন: