ছোট্ট রোগই অচল করতে পারে গোটা জীবন

রাশেদ মামুন
2024-10-24 10:41:00
ছোট্ট রোগই অচল করতে পারে গোটা জীবন

সুস্থ-সবল শিশু

পোলিও। জনসাধারণের কাছে নামটি বহুল পরিচিত। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম পোলিওমাইলাইটিস; যা এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এ রোগ কাউকে পুরোপুরি অচল, আবার কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।

 

একসময় বাংলাদেশে এ ধরনের রোগী কিছুটা থাকলেও এখন নেই বললেই চলে। এমনকি ২০০৬ সালেই পোলিওমুক্ত হয় বাংলাদেশ। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি মেলে ২০১৪ সালে। কিন্তু বছর দুয়েক আগে ভারতে ভাইরাসটি ফের শনাক্ত হওয়ায় সীমানার এ প্রান্তেও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ আর শঙ্কা।

 

পোলিওতে আক্রান্তরা সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। সচরাচর শিশু-কিশোরদের মাঝে এ সংক্রমণ বেশি দেখা দেয়। দুরারোগ্য এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে সেরে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। সাধারণ জ্বর বা শ্বাসকষ্ট থেকে এর লক্ষণ দেখা দিলেও শেষে নিস্তেজ করে ফেলে রোগীকে। কেউ কেউ আজীবনের জন্য বিছানায় শুয়ে কাটাতে হয়। অর্থাৎ পোলিওর কারণে অনেকেই প্যারালাইজড বা পঙ্গু হয়ে যান।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোলিও রোগটি খুব সহজেই ছড়ায়। কারণ পোলিও ভাইরাস রোগীর মলমূত্র দিয়ে বের হয়। আক্রান্তকারীরা কাশি বা যত্রতত্র কফ ফেললেও ড্রপলেট ছড়িয়ে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে। এছাড়া এ রোগটি খুব সহজেই স্পাইনাল কর্ড বা ব্রেনের স্নায়ু কোষের মাইলিনকে আক্রমণ করে। ফলে হতে পারে প্যারালাইসিস। এতে অনেকে মারাও যেতে পারেন। তবে দুই-তৃতীয়াংশ আক্রান্তের শরীরে শুরুতে কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৮৮ সালে গোটা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার। ২০০৫ সালে ছিল দুই হাজার। তবে বাংলাদেশে ২০০৬ সালে এ ধরনের রোগী মেলে ১৮ জন। এরপর থেকে রোগটির অস্তিত্ব না মিললেও শঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানাচ্ছেন তারা। কেননা ভাইরাস বহনকারী শিশুটি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও পোলিও প্রতিরোধে নানান কার্যক্রম চলমান রয়েছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে প্রতি বছরের ২৪ অক্টোবর ‘বিশ্ব পোলিও দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, টিকা হলো পোলিওর একমাত্র প্রতিরোধ। তাই জন্মের ১৪ দিনের মধ্যে শিশুকে এক ডোজ পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে। আর ছয় সপ্তাহ বয়স থেকে পর্যায়ক্রমে চার ডোজ ওরাল পোলিওভাইরাস ভ্যাকসিন খাওয়ানো প্রয়োজন। আশা করা যায় তাহলেই দুরারোগ্য এ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবে শিশু-কিশোররা।


আরও দেখুন: