শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চার দফা দাবি
বিসিএসের ব্যাচভিত্তিকে পদোন্নতি ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক স্থাপনসহ ৪ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি (বিপিএ)
বিসিএসের ব্যাচভিত্তিকে পদোন্নতি ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক স্থাপনসহ ৪ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি (বিপিএ)। বুধবার (১৬ অক্টোবর) প্রদত্ত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন বিপিএ’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ এবং সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন ঢালী।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার মহান বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের উপদেষ্টা পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করায় উপদেষ্টাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণসহ বিভিন্ন রকম অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে জনগণের জন্য একটি কল্যাণধর্মী ও চিকিৎসক বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা আশা করি। আপনার এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা, সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণও সক্রিয় অংশীদার হতে চাই।
এতে আরও বলা হয়, ইউনিসেফের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৮ বছরের কম প্রত্যেকেই শিশু, এর শতকরা সংখ্যা শতকরা ৪৫ ভাগ। তারা শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করে পরিনত হয়। বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ (পেডিয়াট্রিশিয়ান) এই শিশুদের স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য অংশীদার। তারা শিশুদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থ জীবনধারা প্রচারের কাজেও যুক্ত থাকেন। জরুরী চিকিৎসা সেবা ও জটিল রোগ নির্ণয়সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিহার্য, যা শিশুদের সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করে।
ক্লিনিক্যাল দায়িত্বের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ (পেডিয়াট্রিশিয়ান) চিকিৎসা শিক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, তারা ভবিষ্যত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রমে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে, শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদান করেন। মেন্টরশিপ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা (পেডিয়াট্রিশিয়ান) পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসকদের গঠন করতে এমবিবিস, ডিসিএইচ, এমডি, এবং এফসিপিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দান করেন, যাতে তারা পরবর্তীতে সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম হন।
জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু হলেও সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ শিশু রোগীর জন্য বরাদ্দ। ফলে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের অন্তবিভাগে শয্যা সংখ্যার কয়েকগুণ বেশী শিশু রোগী ভর্তি থাকে, বহির্বিভাগেও থাকে উপচে পড়া ভিড়। জনবলের প্রকট ঘাটতি সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ রোগীদের যথাযথ সেবা দেবার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। উল্লেখ্য যে ঢাকা তথা বাংলাদেশে কোন সরকারি শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নেই।
বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণের গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অবদানের পরও, তারা চাকরি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। বৈষম্য বিরোধী সফল আন্দোলনের পরে এ ধরনের বৈষম্যের অবসান জরুরী বলে আমরা মনে করি। দিনদিন শিশুরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও সে তুলনায় পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজসমূহে পদ সৃষ্টি করা হয়নি। অপর্যাপ্ত পদ সংখ্যা, অনিয়মিত এবং ত্রুটিপূর্ণ পদোন্নতি প্রক্রিয়ার ফলে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ কাঙিক্ষত পদোন্নতি পাচ্ছেন না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০তম বিসিএস এর শিশু বিশেষজ্ঞ এখনো ষষ্ঠ গ্রেডের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত, যেখানে কোন কোন বিষয়ে একই বিসিএস এর কর্মকর্তাগণ অধ্যাপক পদে কাজ করছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ২০ তম বিসিএস এর কর্মকর্তাগণ অতিরিক্ত সচিব/ যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। কোন কোন বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ১০-১৫ বছর চাকরি করেও এখনো মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত আছেন। বর্ণিত বৈষম্যের ফলে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন- যা কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ ও চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি যোগ্য সকল কর্মকর্তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধাসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির চার দফা দাবি
১. পদোন্নতি: বিসিএসের ব্যাচ ভিত্তিক
জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতি। যোগ্য সকলকে বিসিএসের সিনিয়রিটি অনুসারে অনতিবিলম্বে কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি প্রদান করা।
২. পদায়ন: প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পদোন্নতি প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণকে ওএসডি হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে বা ইনসিটু পদায়ন করা। উল্লেখ্য যে, চিকিৎসকগণ অনেক বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় ফিডার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ফলে তাদের মূল বেতন পরবর্তী পদোন্নতির ফলে প্রাপ্যপদের মূলবেতনের নিম্নধাপ অতিক্রম করেছে অথবা তার কাছাকাছি আছে। তাই সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া হলে সরকারের আর্থিক ব্যয় তেমন বাড়বে না বলে প্রতীয়মান হয়।
৩. পদ সৃষ্টি: স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত নতুন পদ সৃষ্টি করা। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির পক্ষ থেকে পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
৪. ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিকস (এনআইপি): অন্যান্য ইনস্টিটিউটের মত ঢাকায় একটি সরকারি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিকস (এনআইপি) স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করতে পারি। এই উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে এবং নিশ্চিত করতে আমরা আপনার বিভাগের কার্যকর উদ্যোগ চাই এবং প্রয়োজনে সরাসরি আলোচনা করতে চাই।