৬৭২টি শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি ৩৪তম বিসিএস উত্তীর্ণ পদবঞ্চিত ক্যাডারদের
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী হলে ‘৩৪তম বিসিএস-এ কোটা বৈষম্যের শিকার ক্যাডার বঞ্চিত ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
৩৪তম বিসিএস-এ কোটা বৈষম্যের জন্য সংরক্ষিত ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদে নির্বাহী আদেশে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ক্যাডারপদ বঞ্চিত প্রার্থীরা। শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী হলে ‘৩৪তম বিসিএস-এ কোটা বৈষম্যের শিকার ক্যাডার বঞ্চিত ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
এ সময় তারা নির্বাহী আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আদেশটি (২৬/০১/২০১৬ খ্রি: তারিখের স্বারক নং ০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০৪১.১৫-৩০) বাতিল এবং নির্বাহী আদেশে ৩৪তম বিসিএস-এ কোটার জন্য সংরক্ষিত ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদে বৈষম্যের শিকার উত্তীর্ণ প্রার্থীদের থেকে মেধার ভিত্তিতে সুপারিশ করতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৩৪তম বিসিএস-এ কোটা বৈষম্যের শিকার ক্যাডার বঞ্চিত ফোরামের আহ্বায়ক ডা. মো. তফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্যাডারপদ বঞ্চিত প্রার্থী। আমরা সরাসরি কোটা বৈষম্যের শিকার। পিএসসি কর্তৃক গত ০৭-০২ ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে আমরা ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি। ৩৪তম বিসিএস-এর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে অংশগ্রহন করে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।’
তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট ৩৪তম বিসিএস-এর চূড়ান্ত ফলাফল পিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ সকল ধাপে কৃতকার্য ৮,৭৬৩ জন প্রার্থী থেকে পিএসসি ২,১৫৯ জনকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে সুপারিশ করে। অবশিষ্ট ৬,৫৮৪ জন প্রার্থী কৃতকার্য হওয়ার পরেও ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়নি। অথচ, ৩৫টি ক্যাডার পদে কোটার জন্য ৬৭২টি পদ সংরক্ষণপূর্বক শূন্য রাখা হয়। এই পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবার আবেদন জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ৩৪তম বিসিএস-এর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বিসিএস সাধারন ক্যাডার পদে ৫টি, প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল ক্যাডার পদে ১১১টি (সহকারী সার্জন ৭৪, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৩, ভেটেরিনারি সার্জন ১৪টি), সাধারণ শিক্ষা (প্রভাষক, বিভিন্ন বিষয়ে) ক্যাডারে ২৮৮টি সহ প্রায় ৩৫টি ক্যাডার পদে ৬৭২টি পদ শূন্য রাখা হয়।
৩৪তম বিসিএস-এর পূর্বের ৩৩তম এবং পরবর্তী ৩৫তম, ৩৬তম এবং ৩৭তম বিসিএস-এর চূড়ান্ত ফলাফলে কোন ধরনের কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি এবং কোটার শূন্য পদে উত্তীর্ণ প্রার্থী থেকে মেধা অনুযাযী পূরণ করা হয়। তাই ৩৪তম বিসিএস-এ ক্যাডারে কোটা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রাধানমন্ত্রী, পি.এস.সি-এর চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট
সকলকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। একইসাথে মাঠ পর্যায়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলমান রাখেন ক্যাডারপদ বঞ্চিত প্রার্থীরা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আন্দোলনের ফলে ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর স্বারক নং ০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০৪১.১৫-৩০ নির্দেশনায় ৩৪ তম বিসিএস-এর প্রাধিকার কোটায় সংরক্ষণ নীতি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। কিন্তু ৬৭২টি শূন্য পদ ৩৫তম থেকে পূরণের আদেশ দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, অমানবিক, বৈষম্যমূলক এবং তৎকালীন সরকারের স্বৈরাচারী চিন্তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন। অথচ, ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যাক প্রার্থী মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ রয়েছে। এ কারণে বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আদেশটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যানের কথা জানান ক্যাডারপদ বঞ্চিত প্রার্থীরা।
তারা আরও বলেন, ৩৪তম বিসিএস-এর কোটা বৈষম্যের শিকার প্রার্থীরাই ২০১৩ ও ২০১৫ সালে শাহবাগে প্রথম এই কোটা বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্রভাবে সংগঠিত হয়। এ আন্দোলনের মূলভিত্তি ছিল, কোটা প্রথার বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে তা ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বর্তমান সরকার বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম রাশেদ তমা রানি পাল, সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম জনি, নির্বাহী সদস্য রায়হান আহমেদ, আবু জুবায়ের ও জামিনুর রহমান।