বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট চীনা চিকিৎসক দল
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে চীন থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ মো. হেলাল উদ্দিন এ কথা জানান।
হেলাল উদ্দিন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা আমরা ইন্টারন্যাশনাল প্রটোকল অনুযায়ী দিতে পারছি কিনা, যথাসময়ে আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পেরেছি কিনা, এটা তারা দেখেছে। এই বিষয়ে তারা খুবই সন্তুষ্ট। আরেকটা বিষয় আমাদের হাসপাতালগুলোর ইকুইপমেন্ট ক্যাপাসিটির সীমাবদ্ধতা আছে কিনা, সেটা তারা দেখেছে। এই জায়গায় আমাদের কিছু ঘাটতি আছে।
তিনি বলেন, এই চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে যে সহযোগিতা শুরু হলো সেটাকে আমাদের স্বাস্থ্য সেবায় আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এটার জন্য আমাদেরকে তাদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার পর চীনের রাষ্ট্রদূত এই বিষয়ে সম্মত হয়েছেন এবং আনুষ্ঠানিক একটা প্রস্তাবনা চেয়েছেন। আমরা খুব দ্রুতই এই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা পাঠাবো বলেও জানান হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে চীনা মেডিকেল টিম ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসে এবং ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করে। বুধবার পর্যন্ত তারা পাঁচটি হাসপাতাল ভিজিট করেছেন। এই সময়ের মধ্যে ১৬০ জন রোগীকে দেখেছেন এবং ১০৫ জন রোগীর মেডিকেল রেকর্ডস পরীক্ষা করেছেন। এই টিম মূলত মেডিকেল অ্যাসেসমেন্ট টিম।’
শাহ মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ১০৫ জন রোগীর মধ্যে কয়েকজন রোগী বেশি আহত। এই রোগীদের বিষয়ে চীন থেকে আগত চিকিৎসকরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা তাদের সিনিয়রদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাসেসমেন্ট আমাদের পাঠাবেন। তাদের মধ্যে ২-৩ জন আইসিইউতে আছেন। কিছু আছেন নার্ভ ইনজুরি রোগী।
আন্দোলনে যারা গুরুতর আহত আছেন এমন ১৫ জনকে প্রয়োজনে দেশের বাইরে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা চেষ্টা করছি চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশে এনে অথবা যদি প্রয়োজন হয় এই সমস্ত রোগীদের দেশের বাইরে পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করছি। এই বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টা ও সিনিয়র সচিব খুবই আন্তরিক।
তিনি জানান, আহত রোগীদের চিকিৎসায় কোনও ঘাটতি নেই। গুরুতর আহত যাদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন দরকার হবে সরকার থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,জুলাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০৮ জন নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহতের নাম পাওয়া গেছে। চূড়ান্ত তালিকা হতে আরও সময় লাগবে। সারাদেশ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এর আগে আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন সফররত চীনের মেডিকেল দলের সাথে।
সংবাদ সম্মেলন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসা দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসে চীনা মেডিকেল টিম। এতে রয়েছেন চীনা চিকিৎসক ডং কুইআনের নেতৃত্বে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।