বন্যার্তদের সেবায় ৯টি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বিএমএসএস

ইলিয়াস হোসেন
2024-09-19 22:06:00
বন্যার্তদের সেবায় ৯টি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বিএমএসএস

বন্যার্তদের সেবায় মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস)

ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা বিতরণ, ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি (বিএমএসএস)। বিভিন্ন এলাকায় ৯টি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ৭ হাজারের অধিক বন্যাদুর্গতকে সেবা দিয়েছে সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ডক্টর টিভিকে এ সব তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফর এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স ইফতেখার আহমেদ সাকিব। তিনি জানান, শুরু থেকেই সাধ্যমত অসহায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএমএসএস। এ কাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বলে জানান তিনি।

 

এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ক্যাম্পেইন অ্যাসিসট্যান্ট নিশাদ তাসনিম ডক্টর টিভিকে জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি (বিএমএসএস) এবং Evolution360 এর উদ্যোগে ফেনীর পালগিরিতে সবশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর বন্যা পরবর্তী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এই ক্যাম্পটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ বিতরণ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্যাম্পের দক্ষ চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিম কাজ করেেন। সেবামূলক এই উদ্যোগে স্থানীয় মানুষদের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়।

 

এরআগে, ৬ সেপ্টেম্বর বিএমএসএস, আরিজ ফাউন্ডেশন, উইমেন ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন, মেহের আমজাদ ফাউন্ডেশন, নিউজ ব্রডকাস্টারস্ এলায়েন্স বাংলাদেশ (এনবিএ), নিউট্রিশন পেরেন্টিং সেন্টার (এনপিসি), মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা এন্ড ওমেন্স হেলথসহ আর বেশ কয়েকটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ফেনী অঞ্চলের বন্যা দুর্গত এলাকায় সফলভাবে বন্যা পরবর্তী ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প ও ঔষধ  বিতরণ করা হয়। দিনব্যাপী ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ওসমানী আলিম মাদ্রাসায় বন্যা পরবর্তী ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শ ও ঔষধ বিতরণ করা হয়। এদিন মেডিকেল টিম সর্বমোট ৩ হাজারের বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করে। এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে অংশ নেন ৬০ জনের মেডিকেল টিম। এদের মধ্যে ছিলেন ৪০ জন এমবিবিএস, বি.ডি.এস ডাক্তার ও ২০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, দেশবরেণ্য বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম, (কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক  ডাক্তার: জাহাঙ্গীর কবির, সহযোগী অধ্যাপক ও ভাস্কুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেলসহ স্বনামধন্য আরও অনেক চিকিৎসক।


৩০ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস) এর চতুর্থ দল ফেনী জেলার বন্যাকবলিত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা নিয়ে এগিয়ে আসে। তারা ফেনীর দাগনভূঁইয়া, ফুলগাজী, সোনাপুর, এবং ফেনী সদর হাসপাতালসহ আরও অনেক স্থানে মেডিকেল ক্যাম্প এবং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মেডিকেল ক্যাম্পের প্রথম দিনে দাগনভূঁইয়া অঞ্চলে প্রায় ৩৪০ জন রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। সেইসাথে ২৫ জন আহত রোগীর ড্রেসিং করা হয়। ফুলগাজী এলাকায় প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ রোগীকে সেবা প্রদান এবং ৪০ জন আহত রোগীকে ড্রেসিং করা হয়। 

বিএমএসএস এর মেডিকেল টিম সোনাপুর এলাকায় প্রায় ২০০-২৫০ জন রোগীকে সেবা দেন। এটিই সোনাপুরে বন্যার সময় প্রথম মেডিকেল ক্যাম্প ছিল। প্রথম দিনে, ফেনী সদর হাসপাতালে প্রায় ১৬০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। বন্যা কবলিত এই অঞ্চলে বিএমএসএস প্রথমবারের মতো সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে বাইরে থেকে ডাক্তারদের সহায়তায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। ক্যাম্পের মাধ্যমে ১১ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ৭ হাজার ৬শ’ স্যালাইন, সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেট শিশুদের দুধ, ২,২০০ জন মানুষকে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দেয়া হয়।


২৮ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস) ফেনীর সুন্দর হাট এবং পরশুরাম অঞ্চলে বন্যার্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসে। এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালিত হয়েছে । এই মেডিকেল ক্যাম্পে একজন ডাক্তার এবং চারজন মেডিকেল শিক্ষার্থী সেবাপ্রদান করেছে। ২৭ আগস্ট সুন্দর হাট এবং ২৮ আগস্ট পরশুরাম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে, যেখানে তারা প্রায় ১ হাজার মানুষের সেবা নিশ্চিত করেছে।

 

প্রথম দিন (২৭ আগস্ট) সুন্দর হাট এলাকার মেডিকেল ক্যাম্পে ৩ শতাধিক রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। এটা বন্যার সময় এই গ্রামে স্থাপিত প্রথম মেডিকেল ক্যাম্প ছিল। দ্বিতীয় দিন (২৮ আগস্ট) পরশুরাম এলাকায় প্রায় ৬০০ েথেকে ৭০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। সেখানে বন্যায় বিভিন্নভাবে আহত ৭০ জনের ড্রেসিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি পরশুরাম এলাকায়ও বন্যার সময় প্রথম মেডিকেল ক্যাম্প ছিল।

 

২৭ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস) এবং রি-বিল্ডিং বাংলাদেশ, ইন্সপায়ার ইউনিটি বি.ডি এর পক্ষ থেকে ফেনী জেলার অন্তর্গত বিরুলি, লক্ষীয়ারা ও আশপাশের অঞ্চলের বন্যাদুর্গত এলাকায় সফলভাবে মেডিকেল ক্যাম্প ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। দুই দিন ব্যাপী চলা এই কর্মসূচীতে, প্রথম দিনে দুইটি এলাকায় এবং দ্বিতীয় দিন অন্য দুটি এলাকায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিএমএসএস এর মেডিকেল টিম সর্বমোট ৪ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। একইসাথে ত্রাণ বিতরণ টিম ৭শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে।

মেডিকেল ও ত্রাণ কার্যক্রমে ৪০ জনের একটি টিম কাজ করে। এর মধ্যে মেডিকেল টিমে ছিলেন ৪ জন, যার মধ্যে ১ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ৩ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী। এছাড়াও ৩৬ জন বিশিষ্ট ত্রাণ টিমের সদস্যরা ৪টি বড় এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।

 

২৬ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস) ফেনীর ফুলগাজি, সোনাপুর সহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের চতুর্থ দল নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন। ৬ জন চিকিৎসক এবং মেডিকেল ছাত্রের এই দল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।


২৫ আগস্ট বিএমএসএস এবং Bloodman-এর পক্ষ থেকে সুবর্ণচর, নোয়াখালী বন্যা দুর্গত এলাকায় সফলভাবে মেডিকেল ক্যাম্প ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে, সকালে এক এলাকায় এবং বিকালে অন্য এলাকায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিএমএসএস এর মেডিকেল টিম সর্বমোট ৬ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। একইসাথে ত্রাণ বিতরণ টিম ৪৫০ এর অধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। মেডিকেল ও ত্রাণ কার্যক্রমে ৩৭ জনের একটি টিম কাজ করেছে। এর মধ্যে মেডিকেল টিমে ছিলেন ১২ জন, যার মধ্যে ৩ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ৩ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী, এবং ৬ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য। বাকি ২৫ জন ত্রাণ টিমের সদস্য, যারা ২টি বড় এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে কাজ করেন।

 

২৬ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস' সোসাইটিকে ইউএনভি এর (UNV Bangladesh ) পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। ইউএনভি থেকে প্রাপ্ত সহায়তাযর মধ্যে ছিল- ওআরএস, পানি পরিশোধন ট্যাবলেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন, শিশুদের জন্য উষ্ণ পোশাক এবং বিস্তৃত খাদ্য প্যাকেজ।

 

২৫ আগস্ট বিএমএসএস এর হেলথ টিম নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে যাত্রা করেন। ৫ জন চিকিৎসক এবং মেডিকেল ছাত্রের এই দল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

 

২৪ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে। ৪জন চিকিৎসক এবং মেডিকেল ছাত্রদের সম্মিলিত দল পরবর্তী ৩ দিন বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। বিএমএসএস এর এই টিমকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে ‘রিবিল্ডিং বাংলাদেশ'।

 

২৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর বন্যা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টুডেন্টস' সোসাইটির টিম। তারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

 

২২ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে যাত্রা করেন বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি (বিএমএসএস) এর টিম। ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষিতে মেডিকেল টিম জরুরি চিকিৎসা সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে রওনা হন। চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নিবেদিত দল লক্ষ্মীপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে সেবা প্রদান করেন।


আরও দেখুন: