শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় ৬ প্রস্তাব
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা ও সঠিক ইকোসিস্টেম নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৬টি প্রস্তাবনা দিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্ল্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি অধ্যাপকের মেহজাবিন হক এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ।
তিনি বলেন, দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। পূর্বের জরিপগুলোতে দেখা গেছে করোনার প্রথম এক বছরে সারাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০২১ সালে আঁচল ফাউন্ডেশনের সংগ্রহ করা উপাত্ত অনুযায়ী, সে সময় ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে ৫৩২ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫১৩ জন, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির একটি গুরুতর ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সঠিক ইকোসিস্টেম তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হইনি। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অপ্রতুল। সব মিলিয়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য সরকারি হিসাব মতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন ৩৫০ জন, মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন ৫৬৫ জন আর মনরোগ নার্স রয়েছেন ৭০০ জন। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে ১০ হাজার মানুষের জন্য অন্তত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা প্রয়োজন।
সমস্যা ও সংকট মোকাবিলায় ৬টি প্রস্তাবনা দিয়ে তানসেন রোজ বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিরসনে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আমাদের প্রস্তাবনাগুলো
১. মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলো উদঘাটন করে সমাধানের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা।
২. জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে মানসিক সেবা দেওয়া। আন্দোলনে নিহত বাক্তিদের পরিবারের সদস্যকে সরকারি/বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।
৩. প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং মনবিজ্ঞানী এই দুইয়ের সমন্বয় করে সব জেলা-উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার তৈরি করা।
৪. স্কুল, কলেজ, আলিয়া ও কওমী মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য ট্রমা রিকভারির কর্মশালা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা।
৫. সরকারি উদ্যোগে একটি হটলাইন সেবা চালু করা।
৬. একটি গবেষণা সেল গঠন করা এবং বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহার করে সেবাদান পরবর্তী পুরো সময়ের গবেষণালব্ধ তথ্য জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করা।