২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার: প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2024-09-13 10:33:00
২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার: প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

বাংলাদেশ সচিবালয়

দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের ২৬৪ জন ক্যাডার ফের বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বৈষম্য ও বঞ্চনা মুক্তির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

 

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো এক আবেদনে তারা এই কথা জানান। আবেদন তারা বলেন, বর্তমান সরকার ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস-এর বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ বঞ্চিত ২৬৪ জনকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেওয়ায় সরকারের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। দীর্ঘ ১৪ বছর কিংবা অনেক বছর পর নিয়োগ পেলেও নতুন করে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।

 

আবেদনে তারা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে কিছু ধারা অস্পষ্ট রাখায় আমরা নতুন করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। প্রজ্ঞাপনে অনুচ্ছেদ-ছ সংযুক্ত করে ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ ও ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা দেয়া হলেও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার অজুহাতে সংশ্লিষ্ট হিসাব নিরীক্ষক অফিস ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ করছে না। ফলে নিজ ব্যাচের ১৪ বছর পর চাকরিতে প্রবেশ করে ১৫ বছরের জুনিয়রের সমান বেতন পাবে। যা কিনা তাদের জন্য রীতিমতো পরিহাসের নামান্তর।  এছাড়া প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতার কারণে বিভাগীয় পরীক্ষা ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

তারা অভিযোগ করে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ সংক্রান্ত পূর্বেও প্রজ্ঞাপনগুলোতে চাকরির ধারাবাহিকতা, জেষ্ঠ্যতা ও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণনার বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও আমাদের প্রজ্ঞাপনে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এছাড়া সাম্প্রততিককালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির কথা উল্লেখ থাকলেও আমাদের প্রজ্ঞাপনে এমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে যোগদানের পর বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার অজুহাতে হিসাব নিরীক্ষক অফিস ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। একইসাথে অস্পষ্টতার কারণে বিভাগীয় পরীক্ষা ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

তারা অভিযোগ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক অফিস, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও কোন সুরাহা পায়নি। এমতাবস্থায় তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে - ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগের আলোকে ইনক্রিমেন্টসহ ব্যাচভিত্তিক বেতন নির্ধারণে নির্দেশনা জারি করা; ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগের আলোকে জেষ্ঠ্যতা নির্ধারণে বিভাগীয় ও ঊর্ধ্বতন স্কেল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে নির্দেশনা জারি করা এবং  মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ও সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সূত্র বিবেচনা করে বকেয়া বেতনাদি সুবিধা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা।

 

ক্ষোভ ব্যক্ত করে তারা বলেন, দীর্ঘদিন গত স্বৈরাচারী সরকারের বৈষম্যের শিকার হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত থাকায় বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করি। যার মধ্যে অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় পদোন্নতি লাভ, ব্যাংকিং পেশায় সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার, সরকারি সংস্থায় পদোন্নতি লাভ এবং ঢাকার নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে  সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবেও পদোন্নতি পেয়েছিলাম। বর্তমান সরকারের প্রজ্ঞাপনের পর আমরা পূর্বের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার পদে যোগদান করেছি। প্রজ্ঞাপনে বকেয়া বেতন প্রাপ্তি উল্লেখ না থাকলেও, ভূতাপেক্ষিকভাবে নিয়োগ থাকায় ইনক্রিমেন্টসহ বেতন নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাচের সাথে যোগদান গণ্য হবে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এমন আশ্বাসে চাকরিতে যোগদান করি। কিন্তু এখন শুনতেছি একেবারে নতুন ব্যাচ হিসেবে আমাদের বেতন নির্ধারণ হবে। এটা ভূতাপেক্ষনিয়োগের নামে প্রহসন। এটা সুস্পষ্ট বঞ্চনা। আমরা এই বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই।

এজন্য বৈষম্যের শিকার ক্যাডাররা যাতে নতুন করে বৈষম্যের শিকার না হয় তাই প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএসের ক্যাডারদের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল জনপ্রশাসন সচিবের সাথে সাক্ষাত করেন। সেই সাক্ষাতে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন সুস্পষ্টকরণ করে বৈষম্য দূরীকরণে জনপ্রশাসন সচিব পদক্ষেপ নিবে আশ্বাস প্রদান করেন।


আরও দেখুন: