স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মেগাপ্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাইপলাইনে থাকা ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেগাপ্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে রাশিয়া এবং চীন থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদের হার কমানো এবং ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গণ-অভ্যুথানে শহিদ পরিবারকে পুনর্বাসন ও আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার চিকিৎসা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, গণ-অভ্যুথানে সকল শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহিদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হাল নাগাদ করা হতে থাকবে।
তিনি আরও জানান, এই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার তার যাত্রা লগ্নে “জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সকল শহিদ পরিবার এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা সহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সকল মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
শিল্প কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তৈরি পোষাক, ঔষধ শিল্প এসব এলাকায় শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারো কাম্য হতে পারে না।
ঔষধ শিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, ঔষধ শিল্প এবং তৈরি পোষাক শিল্প দেশের গৗরব। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রমিক ভাই বোনেরা ও তাদের কর্মকুশলতা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। এর সাফল্য এখন থমকে আছে। আমরা এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। দুর্বল করারতো প্রশ্নই ওঠে না। এই দুই শিল্পের কোথায় কোথায় বাধা আছে, সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে তাকে বাধা মুক্ত করতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাদের সহযোগিতা চাইবো যেন বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি আস্থাযোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে। সব কিছুই সম্ভব যদি আমরা শ্রমিক মালিক সম্পর্কটা একটা নির্ভরযোগ্য, আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে পারি।
আরও পড়ুনঃ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পূর্ণ বিবরণ