`বাঁচিয়ে রাখি মানবতা` প্রতিপাদ্যে পালিত হলো বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস
রেডক্রস সোসাইটি দিবস
বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে “বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস” পালন করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। যুদ্ধহীন মানবিক পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় বিশ্বব্যাপী রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের ৭টি মূলনীতি ও মানবসেবামূলক কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় “বাঁচিয়ে রাখি মানবতা”।
বুধবার (৮ মে) সকালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরে জাতীয় পতাকা ও রেড ক্রিসেন্ট পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী।
দিবস উপলক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “প্রতিটি দুর্যোগে আমাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা আর্তমানবতার সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যা সোসাইটিকে আরো গতিশীল করছে। মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখতে জীন হেনরি ডুনান্টের প্রতিষ্ঠা করা এই সংগঠন আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
এসময় সোসাইটির সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান চৌধুরী হেলাল, বোর্ড সদস্য মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল, এ্যাড. সোহানা তাহমিনা, রাজিয়া সুলতানা লুনা, মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম, উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ, বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকসহ সোসাইটির সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যুব স্বেচ্ছাসেবকরা, আইএফআরসি, আইসিআরসি এবং পার্টনার ন্যাশনাল সোসাইটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ এই দিবস উপলক্ষ্যে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে শেষ হয়।
সোসাইটির যুব স্বেচ্ছাসেবক ও সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে অংশ নেয়। দিবস উপলক্ষ্যে সোসাইটির রক্ত কেন্দ্রগুলোতে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ফুল ও খাবার বিতরণ করা হয় রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের রোগীদের মাঝে। জাতীয় সদর দপ্তরের পাশাপাশি সারাদেশে রেড ক্রিসেন্টের ৬৮টি ইউনিট তাদের নিজ নিজ আয়োজনে উদযাপন করেছে দিবসটি।
যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবা ও নিহতদের সৎকার করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা। রেডক্রস সোসাইটি। মুসলিম বিশ্বে এটি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নামে পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এ সোসাইটিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিন হেনরি ডুনান্ট। মহৎপ্রাণ মানুষটির জন্ম হয়েছিল ১৮২৮ সালের ৮ মে। বিশ্বের প্রথম নোবেল বিজয়ী এ মহান ব্যক্তি ১৯১০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে সারা বিশ্বে ৮ মে তার জন্মদিনকে সম্মান দেখিয়ে ‘বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালন করা হয়।
মুসলিম দেশগুলোতে এটি ‘রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, করোনায় মৃতদের শেষকৃত্যের ব্যবস্থাসহ নানা কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে এ সোসাইটি।বিশেষ করে বর্তমানে ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধে নানা বাধার মুখেও গাজাবাসীর জন্য খাবার ও ঔষধ সরবরাহ করছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির পূর্ব পাকিস্তান ব্রাঞ্চ বাংলাদেশের জাতীয় সোসাইটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকারের নিকট স্বীকৃতি লাভের জন্য আবেদন করে। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি গঠিত হয়।
১৯৭৩ সালের ৩১ মার্চ রাষ্ট্রপতি রেডক্রস সোসাইটি আদেশ জারি করেন। এই আদেশের বলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি স্বীকৃতি লাভ করে ।
২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের তেহরান সম্মেলনে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।৪ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি আদেশের সংশোধনী বলে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করা হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশের দুর্যোগকালীন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এছাড়াও নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার জন্য তাদের রয়েছে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৫টি স্বয়ংসম্পূর্ণ অত্যাধুনিক হাসপাতাল।
এছাড়াও ৫টি মাতৃসদন হাসপাতাল, ৬১টি গ্রামীণ মাতৃসদন কেন্দ্র, ৩টি আউটডোর ক্লিনিক, ২টি চক্ষু ক্লিনিক, ৬টি রক্তকেন্দ্র, ১টি নার্সিং স্কুল, ৩টি ধাত্রীবিদ্যা প্রশিক্ষণকেন্দ্র, এইচ আইভি/এইডস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা ও জরুরি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়াও রেডক্রিসেন্টের রয়েছে থ্যালাসেমিয়া রিসার্চ সেন্টার, ডেন্টালের মতো চিকিৎসাসেবার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান