আটা-ময়দা-সুজি দিয়ে বানাত অ্যান্টিবায়োটিকসহ ১০ রকম ওষুধ
বাজারে বন্ধ থাকা কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে টার্গেট করে আটা ময়দা দিয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরি করতো চক্রটি
আটা-ময়দা-সুজি দিয়ে তারা বানাতো বিভিন্ন নামি-দামি কোম্পানির জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্তত দশ রকমের ওষুধ। সেগুলোকে হুবহু আসল ওষুধের মতো মোড়কজাত করে রাখা হতো সাভারের ওষুধের গোডাউনে। সেখান থেকে আসল ওষুধের মতোই ছড়িয়ে পড়তো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এভাবেই দীর্ঘ ৮ বছর ধরে নকল ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, বাজারে বন্ধ থাকা কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে টার্গেট করে আটা ময়দা দিয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরি করতো চক্রটি। এরপর সেগুলোর মোড়কজাত থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র নকল করে আসল অ্যান্টিবায়োটিক বলে বাজারজাত করা হতো। এমনই এক ওষুধ নকল করা প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শাহীন (৩৪), শহীদুল ইসলাম (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৬), হৃদয় (২০), হুমায়ুন (৩৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার পিস নকল অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।
উদ্ধারকৃত নকল অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আটা, ময়দা, সুজি ও বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হতো। মহানগর গোয়েন্দা প্রধান বলেন, এই চক্রটি রাজধানীর অদূরে সাভারের একটি কারখানায় নকল অ্যান্টিবায়োটিকগুলো তৈরি করতো। পরে তা ট্রাক বা পিকআপে ভরে নিয়ে যাওয়া হতো বরিশালে। সেখানে গুদামজাত করে পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হতো। তাদের কাছে এমন অনেক ওষুধ আছে যেগুলো এখন আর উৎপাদিত হয় না। চক্রটি মূলত বাজারে থাকা ও বাজার থেকে বিলুপ্ত এমন ওষুধের মধ্যে রিলামক্স-৫০০ ট্যাবলেট, মক্সিকফ-২৫০, সিপ্রোটিম-৫০০ এমজি, এমোক্সস্লিন, জিম্যাক্স, মোনাস-১০ নকল করে বাজারে ছাড়তো। এছাড়াও চক্রটি কাফকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ডক্টর টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস, কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধও নকল করতো।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শহীদুল দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল কোতোয়াল থানা এলাকার নথুল্লাবাদ এলাকায় নকল বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক মজুত করে বিভিন্ন পরিবহন ও গ্রেপ্তারকৃত শাহিনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃত হুমায়ুন রাজীব এক সময় অপসোনিন কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্মেসিতে নকল অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করতেন। এ ছাড়াও সিরাজুল ইসলাম ও হৃদয় নকল ওষুধ বিক্রয়ের যাবতীয় কাজে অধিক মুনাফার জন্যে শহীদুলকে সহায়তা করতেন। কারখানায় নকল ওষুধ তৈরি করে সেগুলো কুমিল্লার জনৈক আবু বক্কর বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে শহীদুলের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করতেন।
তিনি বলেন, মূলত কুমিল্লার আবু বক্কর এসব নকল ওষুধ তৈরি করে শহীদুলকে দিতেন। তিনি সেগুলো বরিশালে গুদামজাত করে পরে অন্যদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিতেন। যেসব ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে নেই এবং যে ওষুধগুলো বাজারে নেই সেগুলোই তারা তৈরি করে বাজারজাত করতো। আমরা তাদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার করেছি। এর আগেও তারা কোটি কোটি টাকার নকল ওষুধ তৈরি করে বিক্রিও করেছে। তিনি বলেন, তারা গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে এই ভেজাল ওষুধ তৈরি করে আসছিল। যারা এসব ওষুধ উৎপাদন করে আমরা তাদেরও খুঁজছি। তাদের নামে এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা রয়েছে। আমরাও তাদের তিনজনকে আগেও গ্রেপ্তার করেছি। তারা জামিনে বেরিয়ে আবারো এই ব্যবসা শুরু করে। গোয়েন্দা প্রধান বলেন, এখন পর্যন্ত ৮০টি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির ভেজাল ওষুধ তৈরির বিষয়ে তথ্য তারা ওষুধ প্রশাসনকে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদের পিছনে কারা আছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।