বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস: ডিএসএমও এবং জিন এক্সপার্ট

ডা. মো. ফখরুল আবেদীন জনি
2024-03-24 13:13:01
বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস: ডিএসএমও এবং জিন এক্সপার্ট

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস: ডিএসএমও এবং জিনএক্সপার্ট (ইনসেটে ডা. মো. ফখরুল আবেদীন জনি)

১৮৮২, ২৪ মার্চ রবার্ট কচ যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেছেন। মূলত তারই স্মরণে ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হল- হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি।

যক্ষ্মা বাংলাদেশ সহ সাউথ এশিয়ায় মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এই রোগে বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়,প্রতিদিন ১১৫ জন মারা যায়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যক্ষ্মা নির্মূলে এবং যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জনে এই কার্যক্রম আরো জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য সকল নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদানে অংগীকারাবদ্ধ।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অধীনে ডিস্ট্রিক্ট স্যার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার (ডিএসএমও) তত্ত্বাবধানে সকল জেলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সেবা পর্যবেক্ষণ, নজরদারি ও তদারকি অনেক ত্বরান্বিত হয়েছে। গত বছর ডিএসএমওদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি উপজেলায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডি আর যক্ষ্মা) চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে সরকার। এতে রোগীর ভোগান্তি কমেছে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। যা ফলে রোগ ছড়ানো প্রবণতা কমবে। একঝাঁক দক্ষ চিকিৎসকগন শিশুযক্ষ্মা, এমডি আর যক্ষ্মা, টিপিটি (যক্ষ্মা প্রতিরোধী কার্যক্রম) সহ সকল রোগীদের বাড়ি পরিদর্শন করছে। এতে সামাজিকভাবেও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। সেবার পাশাপাশি স্যাভেলেন্সের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নিয়ে মাসিক ও ত্রৈমাসিক সভায় বিভিন্ন পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে থাকেন। এতে জেলার সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারদের যৌথ সমন্বয় সমস্যার সমাধান করে সামনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এসডিজি লক্ষ্য উদ্দেশ্য ব্রত নিয়ে ডিএসএমও চিকিৎসক উপজেলার ডটস সেন্টার ও যক্ষা জিনএক্সপার্ট ল্যাব সহ স্কল কিছু পরিদর্শন করে। কোথাও কোন সমস্যা পেলে তা সাথে সাথে স্থানীয়ভাবে অথবা কেন্দ্রীয় ভাবে দ্রুত সমাধানে কাজ করছে। এতে যক্ষ্মা রোগীরা এই দ্রুত সেবা পেয়ে খুশি প্রকাশ করেন। এছাড়া যক্ষারোগী সকলের এইচ,আইভি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকারী রোগীকে বিনামূল্য চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে থাকে। অনলাইন ইটিবি ম্যানেজার এর মাধমে ডিএসএমও চিকিৎসকগন সকল রোগী মনিটরিং করে থাকে।

বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসায় গণসচেতনতা তৈরী লক্ষ্য যক্ষ্মা নিয়ে সেশন, এছাড়া ইন্টার্ন সহ চিকিৎসকদের আপডেট যক্ষ্মা গাইড লাইনের বিস্তারিত দিয়ে যক্ষ্মা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করছে।

যক্ষ্মা প্রতিরোধী ঔষধ (TPT) কার্যক্রম করা ক্ষেত্রে ডিএসএমওরা রোগী বাড়ি গিয়ে অথবা সভায় যাদের যক্ষ্মা নেই,তাদের যেন যক্ষ্মা ভবিষ্যতে না হয়, সেজন্য চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

যক্ষ্মা সনাক্তকরণে ক্ষেত্রে জিন এক্সপার্ট, ট্রুনেট সহ অত্যাধুনিক ও ব্যয়বহুল যন্ত্র উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দিয়েছে। যা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচিতে আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে দ্রুত উপজেলা পর্যায়ে যক্ষ্মার ধরন নির্ধারণ করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। ফলে রোগ বাতাসের মাধ্যমে ছড়াছে কম, যা রোগ নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।


জিন এক্সপার্ট মেশিন

পর্যাপ্ত পরিমান ঔষধ সরবারহ সহ লজিস্টিক সাপোর্ট অনলাইনের মাধ্যমে ডিএসএমও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিশ্চিত হচ্ছে। এতে মান সম্পন্ন, মেয়াদ সহ সকল কিছু নিশ্চিত হচ্ছে। যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রথম। ডিএসএমও চিকিৎসকগণ টিএলসিএ মাধ্যমে ইটিবি, স্টোর কিপার এর মাধ্যমে ইএলএমএস, এমটিল্যাব (জিন এক্সপার্ট) মাধ্যমে পুরো ল্যাবের তদারকি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করে থাকে।

Xin-Expart

সরকার ডিএসএমও চিকিৎসক যুগান্তকারী এই নিয়োগের পর উপজেলা পর্যায়ে সন্দেহভাজক যক্ষ্মা সনাক্তকরণ,যক্ষা রোগী সনাক্তকরণ, শিশু যক্ষ্মা, ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা সেবার মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে কাজ করতে থাকলে জাতীয় যক্ষ্মা কর্মসূচির যে উদ্দেশ্য- ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুহার ২০১৫ সালের তুলনায় ৯৫% কমাবে এবং নতুনভাবে সংক্রমিত যক্ষ্মারোগীর হার ২০১৫ সালের তুলনায় ৯০% কমিয়ে আনবে। তার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

জেলা পর্যায়ে এর আগে সরকারের শুধুমাত্র যক্ষ্মা রোগেসেবার জন্য চিকিৎসক নিয়োগ ছিলো না। তাদের এই চিকিৎসক নিয়োগে প্রতিটি জেলায় যক্ষ্মা কার্যক্রম এ আমূল পরিবর্তন এসেছে।

২০২৩ সালে যক্ষ্মা উপসর্গ আছে এমন প্রায় ৩০ লক্ষ বেশি লোকের যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩,০১,৫৬৪ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে।

২০২৩ সালে, প্রায় ২৭২৯ জন ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর) রোগী সনাক্ত হয়েছে।

২০২৩ সালে যক্ষ্মা প্রতিরোধী ঔষধ (টিপিটি) ১,৬৫,৬৩৯ জনকে প্রদান করা হয়েছে।

২০২২ সাল থেকে সরকার দেশী ঔষধ কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে যক্ষ্মা চিকিৎসার প্রথম সারির ঔষধ উৎপাদন ও ক্রয় করা হয়েছে।

জেলখানা, শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকায়, ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে গার্মেন্টস এ কর্মরত শ্রমিকদের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে মোবাইল ভ্যান (জিনএক্সপার্ট ও ডিজিটাল এক্সরে মেশিন) দিয়ে যক্ষা রোগী সনাক্তকরণ কর্মসূচি জোরদার করা হচ্ছে।

সরকার নানাবিধ উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যখাতে অনান্য অর্জনের মত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে যে লক্ষ্য, তা সফল হবে। তবে এতে জনগনের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। যক্ষ্মার জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে অনেকদূর পর্যন্ত ছড়ায়। একজন যক্ষ্মা রোগী বছরে দশজন নতুন যক্ষা রোগী বৃদ্ধি করে। সরকারের ডিএসএচিকিৎসক নিয়োগ ও জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপনের মত যুগান্তকারী উদ্যোগ বা পদক্ষেপ ততক্ষণ সফল হবে না যতক্ষন ,জনগন যক্ষ্মা সম্পর্কে আরো বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হবে।

লিখেছেন-

ডা. মো. ফখরুল আবেদীন জনি
এমবিবিএস, এমপিএইচ।
ড্রিস্ট্রিক স্যার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার,
সিভিল সার্জন কার্যালয়, কুমিল্লা। 


আরও দেখুন: