মেরুদণ্ডে জোড়া লাগা শিশুদের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন
মেরুদণ্ডে জোড়া লাগা নুহা ও নাভাকে অপারেশন পরবর্তী সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
১৫ ঘণ্টার সফল অস্ত্রপচারে আলাদা করা হয়েছে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগা নুহা ও নাভাকে। একে দেশের চিকিৎসার ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সোমবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা ১৫ ঘন্টা জটিল অস্ত্রোপচারে তাদের পৃথক করা হয় কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাভাকে। শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নাভা ও নুহা এখন দুজনেই পৃথক। তারা ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাভার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাভার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। দেশের চিকিৎসার ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা এটি।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, শিশু দুটির যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। চিকিৎসার শেষ ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, আইসিইউ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিক, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী প্রমুখসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে মেরুদ-ে জোড়া লাগানো কন্যা সন্তান নুহা ও নাভা গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ জন্ম নেয়। জন্মের অল্প কয়েকদিন পর এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে নুহা ও নাভাকে ভর্তি করা হয়। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ সার্বিক তত্ত্বাবধান করে আসছেন। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম ধাপের সফল অস্ত্রপচার করা হয়। চলতি বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টার জটিল কঠিন অস্ত্রপচারে সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে ৩৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ ১০০ জন মেডিকেল সদস্যের টিম অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে গত বছর ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি রোববার সকাল ৯ টায় থেকে ৩টা পর্যন্ত চলা নুহা ও নাভার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন। এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাভার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী ডিভাইস ৪টি এক্সপান্ডা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। ৬ ঘণ্টা চলা এ অস্ত্রপচারের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন। অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় সাবধানতার জন্য নুহা ও নাভাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই কেয়ার ইউনিট এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। এই অস্ত্রপচারের দিনেও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৎকালীন শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের তত্ত্বাধায়ক ডা. সামন্ত লাল সেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, এই জোড়া লাগানো জমজ শিশু দুজনের চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারি, প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়াসহ সকল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে এ বোর্ড গঠন করা হয়।