ওএমআর শিট ছেঁড়ার অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের কথা শুনলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ওএমআর শিট ছেঁড়ার অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের কথা শুনলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ দায়েরকারী শিক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ছোয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের সচিবালয়ে ডেকে পুরো ঘটনা শুনেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। কথা বলেছেন অভিযুক্ত পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলামের সঙ্গেও। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ে যান হুমাইরাসহ তার পরিবারের সদস্যরা। একই সময়ে অভিযুক্ত পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলামকেও ডেকে পাঠান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সেই দিনের পুরো ঘটনা শুনে শিগগিরই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে হুমাইরার বাবা বলেন, ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলা বিষয়ে সেই দিনের পুরো ঘটনা আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চেয়েছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুরো ঘটনা শুনে শিগগিরই সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযুক্ত পরিদর্শক এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন বলে জানান হুমাইরার বাবা।
তাই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সার্বিক তথ্যপ্রমাণাদি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান হুমাইরার বাবা। তিনি আরও জানান, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে ব্যবস্থা নেবেন তার প্রতি পরিবারের আস্থা রয়েছে।
শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার দিন পাশের এক শিক্ষার্থীর কাছে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস পাওয়া গেলে সন্দেহের জেরে তার উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন হলের দায়িত্বরত কর্মকর্তা। পরে ফেরত দিলেও উত্তর দেয়া সময় ছিল না তার হাতে।
অন্যদিকে, ওএমআর ফরম ছিঁড়ে ফেলা কিংবা পরীক্ষার্থীর কাছে ইলেকট্রিক ডিভাইস পাওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলে দাবি অভিযুক্ত পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলামের।
যেহেতু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় হুমাইরা ইসলাম ছোয়া নামের শিক্ষার্থীর ওএমআর ফরম ছিঁড়ে ফেলা কিংবা পরীক্ষার্থীর কাছে ইলেকট্রিক ডিভাইস পাওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি, তাই আলাদা করে তার চেহারা তার মনে নেই। তবে তদন্ত কমিটির সঙ্গে আবারও সেই হল পরিদর্শনে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন অভিযোগকারীর ওই প্রান্তেই তিনি যাননি। তার স্বাক্ষরও নেই সেই খাতায়।
ডা. নাফিসা জানান, সেই দিন খুব স্বাভাবিক পরিবেশেই পরীক্ষা হয় ৮২৩ নম্বর রুমে। ওএমআর ছেঁড়াতো দূরের কথা, ঘটেনি কোনো অনাকাঙিক্ষত ঘটনা। পরীক্ষার কয়েক দিন পর ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেকটাই বিচলিত তিনি।
ডা. নাফিসা আরও বলেন, ১০টা বাজলেই রুম আটকে দেয়া হয়। কতজন এসেছিলেন, সেটা গণনা করা হয়। সবকিছু হল সুপার করেন। সেখানে ১০৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। দুজন অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষা শেষে বাকিদের খাতা গণনা করে নেয়া হয়। পরীক্ষায় কোনো ডিভাইস পাওয়া বা এরকম কিছু হলে হল সুপার এ বিষয়ে সাধারণত নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানান। কিন্তু আমার রুমে এরকম কোনো ডিভাইস পাওয়া তো দূরের কথা, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সুন্দর মতো পরীক্ষা হওয়ার পর আমরা বের হয়ে আসি।
তিনি আরও জানান, আমাকে যতটুকু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমি সেটাই পালন করেছি। সবার চেহারা তো মনে রাখা সম্ভব না। কোনো কিছু ঘটলে মানুষ মনে রাখে। কিন্তু যেখানে কিছুই হয়নি, একজন শিক্ষর্থীও ভুল করেননি, ফলে ওএমআর শিটও পরিবর্তন করে দেয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে মনে রাখবো? তার খাতায় আমার সাইন নেই; সাইন থাকারও কথা না। কারণ সেখানে আমরা দুজন নারী ছিলাম। এমনকি আমার সাইডে অভিযোগকারীর রোলও পড়েনি।
উল্লেখ্য, অভিযোগকারী পরীক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ছোয়ার দাবি ছিল, একজন পরিদর্শক তার পাশের শিক্ষার্থীর কাছে ডিভাইস পেয়ে সন্দেহজনকভাবে তার খাতা নিয়ে ওএমআর ছিঁড়ে ফেলেন। পরে ফেরত দিলেও তখন আর সময় ছিল না তার হাতে। ফলাফল প্রকাশের দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে সরাসরি এই অভিযোগ জানান পরীক্ষার্থী হোমায়রা। মন্ত্রী আশ্বাস দেন সঠিক তদন্তের। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সংশ্লিষ্ট সবাইকে।