শিশু আয়ানের মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদনে যা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যু
সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার (২৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্নতে খতনা শেষে শিশু আয়ানের জ্ঞান ফেরার মুহূর্তে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। এ সময় তাকে যে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় তার প্রভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে থাকতে পারে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পর আইসিইউতে স্থানান্তর করতে যে সময় নষ্ট হয় তখন তার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সে সময় সিটি স্ক্যান করানো হলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়তো। এছাড়া সিপিআর (কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া) করার ফলে তার বুকের পাঁজর ভেঙে গিয়ে থাকতে পারে। একই সঙ্গে তার অক্সিজেনের ঘাটতিও হয়ে থাকতে পারে।
এর আগে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে ১৫ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে আয়ানের পরিবারকে কেন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
এর আগে শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর পত্রিকায় আসা খবরের ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি কমিটি গঠন করে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাদরুল আলমকে কমিটির সভাপতি করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সত্যজিত কুমার সাহা, অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আনিছুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আলী হাসান।
তদন্তে যেসব বিষয় আনা হয়েছেঃ
আয়ানের বাবা শামীম আহমেদের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য, বাড্ডায় আয়ানের খতনা করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য, গুলশানে আয়ানের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য।
মূল ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডার সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে আয়ানকে তার বাবা নিয়ে আসেন এবং খতনা করান। খতনার পর আয়ানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওইদিনই ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড, গুলশান-২ এ স্থানান্তর করা হয়। গত ৭ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্মারকমূলে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আয়ানের চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যা ছিল। অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্ট লাঘবে আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হতো। এমনকি সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। তাছাড়া খৎনার সময় শিশু আয়ানের স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে প্রতিবেদনের মতামত অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে আর কারও যেন মৃত্যু না হয় এজন্য চার দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সুপারিশগুলো হলো–
১. হাসপাতালে একাধিক এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।
২. রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনকে এনেসথেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিসমূহ ভালোভাবে অবহিত করা।
৩. হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা।
৪. সরকারের অনুমোদন লাভের পর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।