২০২৩ সালে দেশে এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৫০ জন। যা  বিগত যে কোন বছরের তুলনায় অনেক বেশি। একই সময়ে এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬৬ জন। যা এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৯৮৪ জন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮৬ জনের। এরআগে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড ছিল ২০২২ সালে ৯৪৭ জন এবং ও মৃত্যু হয়েছিল ২৩২ জন। এ ছাড়াও ২০২১ সালে দেশে এইডস শনাক্ত হয় ৭২৯ জন। সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ২০৫ জন।

অধিদপ্তরের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন শনাক্ত ১ হাজার ২৫০ জনের মধ্যে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পুরুষ যৌনকর্মী (সমকামী) ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এইচআইভির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো—শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী এবং হিজড়া। একসময় এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এইচআইভি বেশি হতো। বর্তমানে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ কমে আসছে, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সমকামীদের মধ্যে।

বিগত ২০২২ সালে দেশের ৯টি কারাগারে এইচআইভি/এইডস কার্যক্রম পরিচালিত হয়। চলতি বছরে ৯টি কারাগার থেকে ৭ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই মাদক মামলার আসামি। 

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দেশে আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০টি এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০৮ জন শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার রোগী ১৩টি হাসপাতালের মাধ্যমে বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলায় অস্বাভাবিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই জেলায় ১৪৪ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, এইডস রোগী শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সরকার বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এরপরেও রোগটি নিয়ন্ত্রণে না আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।  

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, এইডস সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ জানতে পারে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময়। তখন এইডসের পুরো মিনিং জানতে হয়। এ ছাড়া এইডস নিয়ে আর কোনো প্রচার নেই। দেশের সব হাসপাতালে এইডসের চিকিৎসা নেই, বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালও নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এইডস নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রথম টার্গেট এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা। এইডস শনাক্তের হার ৯৫ শতাংশ হলে আমাদের সফলতা আসবে। আমাদের শনাক্তের হার এখন ৭৫ শতাংশ, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বাকি ২৫ শতাংশ এই রোগ বহন করছে এবং তাদের থেকে ছড়াচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বে ১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের কারণে মৃত ব্যক্তিদের মর্যাদা দান এবং এইডস আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নেতৃত্বে ঢাকাসহ দেশব্যাপী এইডস দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ২ ডিসেম্বর দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে এই দিবসটি পালিত হবে।