মানবসভ্যতা রক্ষায় এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স রোধ করতে হবে: মেজর জেনারেল ইউসুফ
মানবসভ্যতা রক্ষায় এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স রোধ করতে বলেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ
মানবসভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, ভবিষ্যতে এন্টিবায়োটিকের কার্যকর রাখতে হলে- এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত হবে না। দরকার হলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে মানব সভ্যতার শীর্ষ ১০টি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বর্তমানে প্রতিবছর ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সে মারা যায়। এ সংক্রান্ত জটিলতায় আরও প্রায় ৩৭ লাখ লোক মারা যায় বলে জানান তিনি।
এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হওয়ার কারণ সম্পর্কে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এটার অন্যতম কারণ হলো- অপ্রয়োজনে বা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমরা যদি স্বেচ্ছায় বা ডিসপেনসারিতে গিয়ে আমরা নিজেরা ওষুধ কিনে খাই। অনেকে আবার এন্টিবায়োটিকের ফুলকোর্স সম্পন্ন করিনা। আত্মীয়ের খাওয়া বাকি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই খেয়ে থাকি। এছাড়াও পশু খাদ্য ও মাছের খাদ্যে গ্রোথ পাউডার হিসেবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাণীর চিকিৎসায় যথেচ্ছ এটিবায়োটিক ব্যবহারের ফলেও এটিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সৃষ্টি হয়।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। এরমধ্যে, বাজারে থাকা সাধারণ ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক সহজের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেগুলো যাতে সহজেই মানুষের চিনতে পারে- সেজন্য এন্টিবায়োটিক ওষুধের প্রাইমারী প্যাকেজিং এবং সেক্রেন্ডারি প্যাকেজিংয়ে রেড আইডেন্টিফিকেশন মার্ক তথা এন্টিবায়োটিককের প্যাকেটকে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শিশুরাও যাতে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে বুঝতে পারে সেজন্য প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে ডিজিডিএ। এ লক্ষ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কমিকস বই, কালার বই তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সাধারণ জনগণ যাতে অপ্রয়োজনে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিংবা আত্মীয় স্বজনের পরামর্শে যেন এন্টিবায়োটিক সেবন না করেন- সে জন্য সচেতনতামূলক বাক্য ও চিত্র সম্বলিত পোস্টার বিতরণ করা হচ্ছে।
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আরেকটা দরকারি জিনিস হলো- এন্টিবায়োটিকের ফুল কোর্স সম্পন্ন করা। অনেক সময় চিকিৎসক ৫ দিনের ওষুধ দেন। অনেক ক্ষেত্রে ৩ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে গেলে, রোগী ওষুধ সেবন বন্ধ করেন। এমনকি এন্টিবায়োটিকের কোর্সও সম্পন্ন করেন না। এতে জীবাণুটা আধা মরা অবস্থায় থাকে। এক পর্যায়ে জীবাণুটা আরও শক্তিশালী হয়ে প্রাণঘাতী হয়ে যায়। এভাবেই রোগের জীবাণু এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে ওঠে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য আর এন্টিবায়োটিক পাওয়া যাবে না। কারণ নতুন কোন এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হচ্ছে না। তাই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক খাবেন না। কেউ খেলে তাকে নিরুৎসাহিত করার পরামর্শ দেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ।
প্রসঙ্গত: প্রতিবছর নভেম্বরের ১৮ থেকে ২৪ তারিখ বিশ্ব এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হয়। এ বছর সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘সকলে মিলে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করি।’