আড়াই লাখ টাকার সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি ব্যবহার করেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2023-12-21 16:34:56
আড়াই লাখ টাকার সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি ব্যবহার করেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম

প্রখ্যাত কিডনীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম

এখনো আড়াই লাখ টাকা দামের সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়িতে চলাচল করেন রাজধানীর বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতা পদক বিজয়ী চিকিৎসক প্রখ্যাত কিডনীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আলোচনা প্রসঙ্গে এ কথা বলেন।  

অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, একটা রোগীর অবস্থা যদি খারাপ হয়ে যায় তখন আর ভাল লাগে না। যত টাকাই দেন না কেন, ভাল লাগবে না। সে জন্য কাজের মানটা সবচেয়ে ভাল রাখতে হবে। তাহলে টাকা অটোমেটিক্যালি আসতে থাকবে। অবশ্য টাকার ব্যবহার কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না। কারণ টাকা দিয়ে বিলাসিতা করতে হবে- সেজন্য আল্লাহপাক টাকাটা আমাদের দেননি। 

তিনি বলেন, মানুষের চলার জন্য খুব কম টাকা দরকার। মানুষের চাহিদা আছে, কিন্তু আন-নেসেসারি খরচ করে। আমি এখনও আড়াই লাখ টাকামূল্যের সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি ব্যবহার করি। মাঝে-মধ্যে বড় জায়গায় গেলে কিছুটা লজ্জা লাগে। কিন্তু সচরাচর কোথাও গেলে আমার বাঁধে না। বাঁধতো, যদি আমি আড়াই কোটি টাকা গাড়ি ব্যবহার করতাম। আমার আড়াই লাখ টাকায় কেনা সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়িটা এখনো বেশ চলছে। অবম্য বছরে বছরে এসিটা ঠিক করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম মেয়েরা বড় হচ্ছে- ওরা পুরনো গাড়িতে মাইন্ড করে কি-না। কিন্তু না, ওরা এ নিয়ে কিছুই বলেনি।  

অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, দুই কোটি টাকা আমার ছিল। সেটা আমি ব্যবহার করলাম কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় অত্যন্ত জরুরি এলসিএসএমএস মেশিনটা কিনে। হয়তো মেশিনটা থেকে আমার দুই কোটি টাকা আসবে না। এ মেশিনটা হয়তো তার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে একটা মেশিন রিপ্লেস করতে হয়। কিন্তু এই মেশিনটা যে রেজাল্ট দেবে, যে মান আমি পাবো- কিডনির রোগীদের সেবাকে যে মানে নিয়ে যাওয়া যাবে- সেটা কিন্তু টাকা দিয়ে মূল্যায়ন হয় না।  

নিজের সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম আরও বলেন, আমার ক্ষুধা লাগছে- তখন আমার ডাল-ভাতই যথেষ্ট। পোলাও-কোর্মা খেতে হবে- বড় জায়গায় যেতে হবে- এটা আমার কেন যেন লাগে না। বরং আমার কাছে খারাপ লাগে। আপনি মাঝামাঝি থাকেন। বিলাসিতা অ্যাভয়েড করেন। যদি টাকা পয়সা বেশি হয়, তাহলে ভাল কাজে ব্যবহার করেন। তাহলে আপনার মনটাতে অনেক শান্তি লাগবে। 

উল্লেখ্য, শুধু চিকিৎসক হিসেবে নন, ডা. কামরুল পরিচিত তার মহানুভবতার জন্যও। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তার প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে খরচও ন্যূনতম। রোগীদের ফলোআপে উৎসাহিত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট দেখার ফি নেওয়া হয় না। এ ছাড়া খরচ কমাতে কিডনি সংরক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা এক ধরনের দামি তরলের বিকল্প তৈরি করেছেন তিনি।

অধ্যাপক কামরুল ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৮২ সালে ঢামেক থেকে আটটি মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদকসহ এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস এবং ২০০০ সালে বিএসএমএমইউ থেকে ইউরোলজিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

উচ্চশিক্ষা নেন রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব এডিনবার্গ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ডা. কামরুলের বাবা আমিনুল ইসলাম পাকশী ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করায় ওই সময় স্থানীয় রাজাকার ও বিহারিরা তাকে হত্যা করে।


আরও দেখুন: