দুশ্চিন্তায় পড়ালেখা করতে পারছেন না ঢামেকের ফিলিস্তিনী ছাত্র ইব্রাহীম
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থী ইব্রাহীম সেলিম মোহাম্মদ কিসকো
সামনে পরীক্ষা থাকলেও দুশ্চিন্তায় পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছেন না ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থী ইব্রাহীম সেলিম মোহাম্মদ কিসকো। টানা ১২ দিন ধরে পরিবারের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি। সূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন।
ইব্রাহীম সেলিম মোহাম্মদ কিসকো ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায় হলেও সঙ্গত কারণে অবস্থান বাংলাদেশে। নির্বিচার হামলা চালিয়ে এরইমধ্যে তাদের পৈত্রিক বাড়িঘর গুড়িয়ে দিয়েছে ইসারায়েলি সেনারা। ১২ দিন আগে পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইলে সামান্য সময়ের জন্য কথা হয় তাঁর। কেমন আছো?- সবাই বেঁচে আছি- এই সামান্য বাক্য বিনিময়ের পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
তারপর অসংখ্যবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছেন ইব্রাহীম। মোবাইলের ফোল্ডারে জমা থাকা স্বজনদের ছবি দেখে সান্তনা খুঁজছেন এখন।
ইব্রাহীম জানান, গাজাতে বাবা-মা ও চার ভাই দুই বোনের একটা চমৎকার পরিবার তাদের। বাবা স্থানীয় একটি স্কুলের গণিতের শিক্ষক। ইসরায়েলিরা তাদের বাড়িসহ আশপাশের সব বাড়িঘর গুড়িয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না ইব্রাহীম।
এদিকে, সামনে পরীক্ষা থাকলেও দুশ্চিন্তায় পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছেন না।পরিবারের লোকেদের মৃত্যুর খবর না পেলেও বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন ইসরায়েলি হামলায় তাঁর অর্ধশতাধিক আত্মীয়-স্বজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে ছোটবেলায় অনেক সময় কাটিয়েছেন তিনি। অনেকেই অন্যত্র পালিয়ে গেছেন। অনেকেরই খোঁজ মিলছে না। যারা বেঁচে আছেন তারা সবাই অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সামান্য একটু খাদ্য সহায়তার জন্য অনেকটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ বিচ্ছন্ন থাকায় ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাস থেকেও তেমন কোন তথ্য পাচ্ছেন না।
ইব্রাহীম জানান, অন্যান্য গাজাবাসীর মতই খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে আছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ত্রাণের কথা বলা হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে তা পাচ্ছেন না অসহায় ফিলিস্তনীরা।
এদিকে, মেডিকেলের ছাত্র হয়েও দেশের জন্য কিছু করতে না পারায় তীব্র মানসিক কষ্টে আছেন ইব্রাহীম। এই ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যেও পরিবার ও দেশের জন্য কিছু করতে না পারাটা আরও অনেক বেশি কষ্টের। যে কারণে নিজেকে অনেক অসহায়বোধ করছেন ইব্রাহীম। গাজার হাসপাতালগুলোতে তীব্র চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। এ কারণে ভালভাবে পড়ালেখা শেষ করে সময়মত দেশে ফিরতে চান।
জন্মের পর একুশ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিনিয়তই গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলের হামলা ও মৃত্যু দেখে আসছেন ইব্রাহীম। যেকোন অযুহাতেই তাদের ওপর হামলা করাটা ইসরায়েলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাঁরমতে, গাজায় এখন যা হচ্ছে তা গণহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়।
ইব্রাহীম জানান, তিনি আরও বাংলাদেশে আরও ৭০/৮০ জন ফিলিস্তিনী পড়ালেখা করছেন। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলা অবিলম্বে বন্ধের দাবি ইব্রাহীমসহ সকল ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থীদের।