সচেতনতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব: অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক

ইলিয়াস হোসেন
2023-11-12 12:50:45
সচেতনতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব: অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক

সচেতনতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব (ইনসেটে অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক)

সচেতনতার সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুসফুসের প্রদাহজনিত ভয়াবহ রোগ নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। এজন্য সবাইকে দূষণ এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে ডক্টর টিভিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এই প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।    


অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, নিউমোনিয়া অত্যন্ত জটিল রোগ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের মাধ্যমে নিউমোনিয়া ছড়ায়। এরফলে মানুষের ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। সব বয়সী মানুষেরই নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে শিশু বৃদ্ধরা এতে বেশি আক্রান্ত হন। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে অধিক রোগী দেখা যায়। শিশু ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের জ্বর ছাড়াই নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘাম ও বুকে ব্যথা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে নিউমোনিয়া এড়ানো সম্ভব। নিউমোনিয়া আক্রান্তদের সাধারণত: জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাঁপুনি, বুকে ব্যথা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।

তিনি বলেন, ইদানিং হাসপাতালে নিউমনিয়ায় আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে বয়স্ক ও সিওপিডি রোগীদের নিউমোনিয়ার হার বেশি। নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ার কারণ হিসাবে ঠান্ডা আবহাওয়া, ধূলাবালি ও ধূমপান, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ও পুষ্টিহীনতাকে দায়ী মনে করা হয়।


প্রাথমিক লক্ষণ দেখা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. আশরাফুল হক। এতে অল্প চিকিৎসায় নিউমোনিয়া নিরাময় করা সম্ভব।


এছাড়াও কিন্তু কিছু অভ্যাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে বলেন জানান তিনি। সেগুলো পারিবারিক গণ্ডিতেই মেনে চলা সহজ।


অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। বাসস্থান, পোশাক পরিষ্কার রাখতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করা; পরিষ্কার কাপড়ে নাক ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। দরজার হাতল, মোবাইল ফোন, রিমোট প্রভৃতি ধরার পর হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত না করে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ করার অভ্যাস ছাড়তে হবে। ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। 

নিউমোনিয়া রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। রোগীদেরকে নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।


নিউমনিয়া রোগ যেন না হয় সেজন্য ঠান্ডা ও ধুলাবালির সংস্পর্শে না যাওয়া, ধূমপান পরিহার করা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। 


এছাড়াও জনসাধারণকে নিজে নিজে চিকিৎসা করা বা অপচিকিৎসা বা ফার্মেসিতে গিয়ে নিজের মতো করে ওষুধ কিনে খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। অনেকে ফার্মেসি থেকে নিজের ইচ্ছামাফিক সাধারণ ওষুধ এমনকি এন্টিবায়োটিকও কিনে খেয়ে থাকেন। এতে অনেকের এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ছেন। শরীরে কোন ধরনের ওষুধ আর কাজ করে না। শুধুমাত্র নিকটস্থ হাসপাতাল কিংবা এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শসহ ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন তিনি। 

নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে টিকা রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিলেই নিউমোনিয়া সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। 

নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সচেতনতাই মুখ্য কাজ। এ কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন তথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক।


আরও দেখুন: